সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

আনন্দের ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

প্রতিবছর দুই ঈদেই সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রীদের নানা দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হতে হয়। এর কারণ, ঈদের সময় যাত্রীর চাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া। সড়ক, নৌ কিংবা রেলওয়ের জন্য আলাদা আলাদা কর্তৃপক্ষ আছে। কিন্তু ঈদের সময় এই অতিরিক্ত যানবাহন ও যাত্রী সামাল দিতে তাদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। তদুপরি ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে সড়ক মেরামতের কাজ করা হচ্ছে, যা যানবাহনের গতি আরও শ্লথ করে।

প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ঈদযাত্রায় এবার ১২টি স্থানে যাত্রীভোগান্তি বেড়ে যেতে পারে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা ও ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ঈদের আগের দিনগুলোতে বড় ধরনের যানজটের আশঙ্কা করছেন যানবাহনের চালকেরা। ঈদের ছুটিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের সেতুর পূর্ব প্রান্তের সেই ৮ কিলোমিটার অংশ এবং সড়কের ১৮টি সেতুতেও যানজটের আশঙ্কা বেশি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট সড়কেও কমবেশি যানজটের আশঙ্কা আছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময়ও একই চিত্র দেখা গেছে।

আমাদের দেশে সড়কের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি, ঈদের সময় এর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে রেলওয়ে বিকল্প হতে পারত। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা রেলওয়ের প্রতি বরাবর বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছেন। একের পর এক রেলওয়ে মন্ত্রী বদল হন। কিন্তু রেলব্যবস্থা সুশৃঙ্খল হয় না। অতীতে ঈদ এলেই রেলওয়ের টিকিট নিয়ে মহাকেলেঙ্কারি হতো, মানুষ লাইন দিয়ে টিকিট পেত না, কিন্তু কালোবাজারিতে ঠিকই টিকিট বিক্রি হতো। অনলাইনে টিকিট বিক্রির কারণে সম্প্রতি সেই সমস্যার সমাধান হলেও রেলওয়ে প্রশাসন ট্রেনের সময়সূচি রক্ষা করতে পারেনি। ঈদের বিশেষ ট্রেন চালুর দিনই আধা ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন বিলম্বে যাত্রা করে।

এবার ঢাকা থেকে প্রতিদিন ৩৩ হাজার ৫০০ যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারবে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কিন্তু তারা যদি সময়সূচিই রক্ষা করতে না পারে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে কীভাবে? ঈদে ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ের পেছনে অন্য কোনো ‘রহস্য’ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। ট্রেন সময়মতো না চললে বেসরকারি পরিবহনমালিকদের ব্যবসা আরও রমরমা হয়। প্রতিবেশী ভারতসহ সব দেশেই রেলওয়ে সবচেয়ে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। অথচ বাংলাদেশে রেলপথ বন্ধ করতে পরিবহনমালিকেরা ধর্মঘট পর্যন্ত করেছেন।

অতীতে দুই ঈদেই যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাওয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে অপেক্ষা করতে হতো ফেরির জন্য। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মাওয়া ফেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও আগের চেয়ে অনেক কম। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু বিরাট স্বস্তি এনে দিয়েছে। ঢাকা থেকে তিন ঘণ্টায় বরিশালে ও পাঁচ ঘণ্টায় খুলনায় যাওয়া যায়।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যাত্রীদের চাপ কমেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এখন বর্ষা মৌসুম। যেকোনো সময় ঝড়–বৃষ্টি হতে পারে। অতএব নৌযানে চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা জরুরি।

গত ঈদে সড়কে রেকর্ড সংখ্যক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও রোড সেফটি কোয়ালিশন দুর্ঘটনা রোধে কিছু সুপারিশ করেছে। সরকার এসব সুপারিশ আমলে নিয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খল করতে পারলে লাখ লাখ মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ হবে। কারও আনন্দের ঈদযাত্রা যাতে বিষাদে পরিণত না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাই সজাগ থাকবেন আশা করি।