সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

নজরদারি বাড়ান, ব্যবস্থা নিন

মানুষ নিজে স্বাধীন থাকার ব্যাপারে যতটা গুরুত্ব দেয়, পশুপাখির ক্ষেত্রে ততটা নয়। বরং পশুপাখি নিয়ে মানুষের একটি প্রবণতা হলো সেগুলোকে পোষ মানাতে চাওয়া। সে জন্য বিশ্বব্যাপী পোষা পশুপাখির বাজারও রমরমা। সেই বাণিজ্যকে ঘিরে আছে নানা অনিয়ম বা অবৈধ কার্যক্রম, যা এ দেশেও আমরা দেখে থাকি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশুপাখি পোষার প্রবণতা বেড়েছে। অনেকে মনে করেন, নগরকেন্দ্রিক নানা বাস্তবতা ও যান্ত্রিক জীবনযাপনের কারণে এমনটি ঘটছে। যার কারণে আমরা দেখি, গত তিন-চার বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশি-বিদেশি পাখি কেনাবেচা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। অবৈধভাবে বিমানবন্দর দিয়ে আসছে নানা ধরনের বিদেশি পাখি, যা আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বলিভিয়ার ম্যাকাও, দক্ষিণ আফ্রিকার সারস, নিউজিল্যান্ডের কাকাতুয়া, আর্জেন্টিনার ট্যুকান, ব্রাজিলের ইমু—কী নেই সেখানে। বিশেষ কায়দায় ছোট বাক্সে এসব পাখি নিয়ে আসা হয়।

একেবারে বুনো পরিবেশ থেকে ধরে আনা পাখিও বাংলাদেশের পোষা পাখির বাজারে ঢুকছে। বাংলাদেশে বন বিভাগের ২০২২ সালের অভিযানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়া মালি থেকে আনা ২৭টি হুতুম প্যাঁচা আর ইগল সে রকমই একটি উদাহরণ। অবৈধ পাখি–বাণিজ্য বিস্তার লাভ করায় বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ–বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বাংলাদেশের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে গত জুলাই মাসে। এটি অবশ্যই দুঃখজনক।

সাইটিস (কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন ইনডেঞ্জারড স্পিসিস অব ওয়াইল্ড ফাউনা অ্যান্ড ফ্লোরা) হচ্ছে সেই আন্তর্জাতিক চুক্তি। সাইটিস প্রথমে ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দেয়। ‘পোষা পাখি পালনের নীতিমালা ২০২০’ আধুনিকায়নসহ চারটি প্রধান বিষয়ে সুপারিশ করে। এর মধ্যে আরও ছিল পোষা প্রাণী–বাণিজ্যে নজরদারি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল তথ্যভান্ডার তৈরি করা। এ বাজার নিয়ে গবেষণা ও সমীক্ষা করার আরজি ছিল। অথচ এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত মাত্র দুটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পোষা পাখিপালকদের বাধ্যতামূলক লাইসেন্স গ্রহণ, পোষা পাখিদের চিহ্নিতকরণ রিং পরানো, ব্যক্তিমালিকানাধীন পোষা পাখির সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাঁটাবন পোষা প্রাণীর বাজারে অবৈধ কার্যক্রম রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিছু পাখি খামারের লাইসেন্স বাতিল করেছে। এগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখানে আরও কিছু করার আছে। সাইটিসের শর্ত পূরণে এখনো যথেষ্ট ঘাটতি থেকে গেছে। অবৈধ পাখি–বাণিজ্য রোধে নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে কারা এ বাণিজ্য করছে, বিমানবন্দরসহ নানা জায়গায় যে চক্র আছে, শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।