নারীরা যখন এগিয়ে যান, এগিয়ে যায় সমাজও। এ জন্য নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা একটি রাষ্ট্রের জন্য বড় দায়িত্ব। নারীর উন্নয়নে সব সময়ই রাষ্ট্র ও সরকার বহুমুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
এরপরও বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষেও নানা বাস্তবতার বেড়াজালে কর্মজীবনে যুক্ত হতে পারেন না বিপুলসংখ্যক নারী। সেখানে পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের ভুক্তভোগী হতে হয় আরও বেশি।
তাঁদের মধ্যেও যে অনেকে স্বাবলম্বী হওয়ার কিংবা সমাজের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখেন না, এমন নয়। সবাই না পারলেও অদম্য ইচ্ছা ও সাহসিকতার জোরে কেউ কেউ সফল হন এবং সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেন। তেমনই একজন হচ্ছেন রংপুরের পায়রাবন্দের ৫৮ বছর বয়সী আছিরন নেছা। যে এলাকায় জন্ম নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার, সেখানকারই মেয়ে আছিরন বদলে দিয়েছেন গোটা গ্রাম।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মাত্র ৯ বছর বয়সে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছিলেন আছিরন নেছা। তাঁর বয়স যখন ১৮, তখন তিনি মেয়েকেও বাল্যবিবাহ দেন। সে সময় মা-মেয়ের বাল্যবিবাহের শিকার হওয়ার বিষয়টি বেশ আলোচনা তৈরি করে। জীবনে চলার পথে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হন আছিরন। সব ধরনের লজ্জা ও ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তুমুল ইচ্ছাশক্তি লালন করে যান তিনি। একের পর এক উদ্যোগ নেন, বারবার হোঁচট খান।
অভাব ও অর্থসংকটের কাছে পরাজিত না হয়ে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যেতে পিছপা হননি তিনি। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজ প্রচেষ্টায় আছিরন হস্তজাত পণ্য বুননের কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। একসময় আমরা দেখি, পায়রাবন্দের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১৫০ নারীকে বিনা মূল্যে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মমুখী করে তুলেছেন আছিরন। সেই সঙ্গে বদলে গেছে তাঁদের জীবনমানও।
পাট দিয়ে তৈরি নানা পণ্যের উৎপাদনকেন্দ্র ও শোরুম গড়ে তুলেছেন তিনি। ৫০ জনের মতো কর্মী তাঁর প্রতিষ্ঠানে। দেশের বিভিন্ন জেলায় পাট ও বস্ত্র মেলায় বিক্রি হয় আছিরনের পণ্য।
এমনকি সেসব পণ্য দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী বলেন, আছিরন গ্রামের নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছেন। তাঁর এ মহৎ উদ্যোগ এখনো অব্যাহত। আছিরনরাই দেশের ভবিষ্যৎ।
বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া একজন নারীর সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা অনেক নারীর জন্য অনুপ্রেরণার। আছিরনের মতো নারীরাই একটা সমাজে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন। আমরা আছিরনকে অভিবাদন জানাই।