সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

জনজীবনের ভোগান্তি বাড়াবেন না

বিদেশি অতিথি কিংবা পর্যবেক্ষকেরা এসে নির্বাচন নিয়ে যতই সুপরামর্শ দিয়ে যান না কেন, আমাদের রাজনীতি চলছে সেই গতানুগতিক ধারায়। নেতারা মুখে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও তঁাদের আচরণে উল্টোটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

১২ জুলাই একই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কোনো রকম সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি, এটা জনমনে স্বস্তি দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি মেহমানদের কাছে নিজেদের গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।

কিন্তু নিত্য যানজটের শহরে একই দিনে বড় দুই দলের কর্মসূচি যে নগরবাসীকে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়, ১২ জুলাইও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ধারণা করা গিয়েছিল, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো ১৮ ও ১৯ জুলাই বিএনপি-ঘোষিত পদযাত্রার দিন আওয়ামী লীগও প্রায় অনুরূপ কর্মসূচি দিয়েছে। এটা কেবল অগণতান্ত্রিক নয়, পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়ারও শামিল। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির দিনে বিএনপি বা অন্য কোনো দল এ ধরনের পাল্টা কর্মসূচি নিলে কি তারা সেটা মেনে নিত?

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সভা-সমাবেশ করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সেই সভা-সমাবেশ ঘিরে বিশৃঙ্খলা কিংবা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় কি না, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। বিরোধী দল যেদিন কর্মসূচি নেয়, সেদিন আওয়ামী লীগকেও কেন কর্মসূচি নিতে হবে? তারা অন্য দিন আরও বেশি লোক নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে পারত।

ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধী দল যাতে কর্মসূচির নামে শান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে, সে জন্য দলীয় কর্মীদের পাহারায় রাখা হয়? শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সেই দায়িত্বটি তঁারা কেন নিচ্ছেন?

আমরা সব সময় হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি নেওয়ারও বিরোধিতা করেছি। কেননা এ ধরনের কর্মসূচি দেশের অর্থনীতিকে যেমন ধ্বংস করে, তেমনি জনগণের ভোগান্তি বাড়ায়।

কিন্তু পাল্টা কর্মসূচির নামে বিরোধী দলের সভা–সমাবেশে বাধা দেওয়া হলে তার পরিণতিতে যদি সংঘাত–সহিংসতা দেখা দেয়, তবে তার দায় কে নেবে? সাপ্তাহিক কর্মদিবসে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সকাল ও বিকেলে কর্মসূচি পালন করলে ঢাকা শহর যে পুরোপুরি অচল হয়ে যাবে, সেটি তারা আমলে নিচ্ছেন না কেন?

গতকাল সোমবার খুলনায় বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ সামনে রেখে হঠাৎ করে দুই রুটে বাস বন্ধ করার ঘটনা কেবল অস্বাভাবিক নয়, অমানবিকও। এর ফলে কেবল ওই সমাবেশে আগত যাত্রী নয়, সাধারণ নারী-পুরুষ ও শিশুরাও চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। অতীতেও বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে এ রকম পরিস্থিতি হয়েছিল, যার পুনরাবৃত্তি দেশকে আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেবে।

নির্বাচনের আর মাত্র ছয় মাস বাকি। সরকার মুখে বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায়, বাস্তবে তারা উল্টো পথে হাঁটছে। আমাদের আহ্বান থাকবে, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থেকে বিরত থাকুন। আর যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন, তঁারা কেন কর্মসূচির নামে এভাবে জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন?

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যা সমাধান করাই হলো উত্তম উপায়। অতীতে আলোচনায় সমাধান হয়নি বলে রাস্তায় মারামারি-হানাহানি করতে হবে, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি না দিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকট আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবেন, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।