সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

নিচু সেতুতে ‘নদী হত্যা’

এমন পরিকল্পনা কি পরিবর্তন হবে না

অপরিকল্পিত বাঁধ, রাস্তা ও সেতু তৈরি করার ফলে আমাদের নদীগুলোর বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এরপরও এমন পরিবেশবিধ্বংসী পরিকল্পনা নীতির কোনো পরিবর্তন আমরা দেখি না। যেন জেনেবুঝেই নদীর বুকে ছুরি চালানো হচ্ছে। যেমন যশোরে ৭টি নদীতে কম উচ্চতার ১১টি সেতু নির্মাণ করে নদীগুলোকে গলা টিপে মারার বিপুল আয়োজন করা হচ্ছে।

সেতুগুলো এতটাই নিচু করে নির্মাণ করা হচ্ছে, বর্ষাকালে কোনো নৌযান সেগুলোর নিচ দিয়ে চলাচলের সুযোগ রাখা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও শুষ্ক মৌসুমেও নৌযান চলতে পারবে কি না, সেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। গোটা একটি জেলায় এতগুলো সেতু নির্মাণে এমন ভুল পরিকল্পনা কি তামাশা নয়? আমরা এমন উন্নয়নকর্মে ক্ষুব্ধ ও নদীগুলোর সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, যশোরে অপরিকল্পিতভাবে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের ঘটনা নতুন নয়। ইতিমধ্যে সেখানকার ভৈরব নদের ওপর ৫১টি অপরিকল্পিত সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করে নদটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ ও স্থানীয় লোকজনের আপত্তি থাকলেও তা কোনো কাজে আসেনি; বরং এখন আরও ৭টি নদীতে কম উচ্চতার ১১টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, নদীগুলোর কোনোটির ক্ষেত্রে সেতুর উচ্চতা হওয়ার কথা পানির স্তর থেকে গার্ডারের নিচ পর্যন্ত ১৬ ফুট, কোনোটির ২৫ ফুট।

কিন্তু নির্মাণাধীন সবগুলো সেতুর উচ্চতা হচ্ছে ৪ দশমিক ৫৯ ফুট থেকে ১১ দশমিক ৫০ ফুট পর্যন্ত। ১০টি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকল্পের আওতায়।

এলজিইডি ও সওজ কীভাবে পারল সেতুগুলো নির্মাণের এমন সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে? সামান্য বিবেকেও কি বাধল না তাদের? সেতু নির্মাণ করতে হলে নৌযান চলাচলের নিশ্চয়তার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। সেই ছাড়পত্রও নেয়নি এলজিইডি ও সওজ। বাংলাদেশ নদী কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে এসব সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি জানানোর পরও তা আমলে নেওয়া হয়নি।

এরপরও এভাবে সেতু নির্মাণ করা কি গোঁয়ার্তুমি নয়? খামখেয়ালিভাবে এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের উদ্দেশ্য কী? এমন প্রকল্পে জনগণের অর্থের অপচয় তো বটেই, নদীকে হত্যার আয়োজন করে সংশ্লিষ্ট জনপদের জন্য বিপদ কেন ডেকে আনছেন তঁারা?

এখানে জেলা প্রশাসকের ভূমিকা নিয়েও আমরা হতাশ। এতে জেলার নদীগুলোর দেখভালে তাঁর ব্যর্থতা কি প্রকাশ পায় না? আমরা আশা করব, এভাবে কম উচ্চতার সেতু নির্মাণ বন্ধ হবে। যথাযথ মানদণ্ড ছাড়া কোনো সেতু যাতে নির্মাণ করা না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক।