সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

আক্রান্তরাই আসামি

চিতলমারীর ঘটনা কী ইঙ্গিত দেয়

কেউ অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া আইনের শাসনের পূর্বশর্ত। কিন্তু ঘটনা না ঘটলেও কথিত অভিযোগে নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার কী যুক্তি থাকতে পারে? বাগেরহাটের চিতলমারীর ঘটনাটি কী ইঙ্গিত দেয়?

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বাগেরহাটের চিতলমারী বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন কর্মী দলের খুলনার একটি সমাবেশে গিয়েছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন তাঁদের মারধর করেন।

পরে খালের অন্য পাড়ে ককটেল ফাটানোর জের ধরে চিতলমারী থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলা হয় ১১ অক্টোবর। আসামিদের মধ্যে দুজন জাতীয় পার্টির নেতা ছাড়া সবাই স্থানীয় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেন। পরে সেখান থেকে মিছিলসহ আবার বাজারে চলে আসেন। এরপর কে বা কারা ককটেল ফাটায়।

২৫ অক্টোবর ঘটনাস্থলে গিয়ে ওহিদ শেখসহ পাশাপাশি তিনটি বাড়িতে হামলার চিহ্ন দেখা গেছে। বাড়ির দরজা-জানালা, িটনের বেড়া—সবখানে দা-কুড়ালের কোপের দাগ। লাঠিসোঁটার আঘাতে ভেঙেছে কাঠের জানালাগুলো। ঘরের মধ্যেও হামলার চিহ্ন স্পষ্ট। খাট, রেফ্রিজারেটর, শোকেস, ফ্যান, থালাবাসন—সবই ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘরের সামনে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বড় একটি ট্যাংকও কুপিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

মামলার ৭ নম্বর আসামি কাননচক গ্রামের তানভীর শেখ প্রথম আলোকে বলেন, খুলনায় বিএনপির সমাবেশে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের লোকজন আগে থেকেই হুমকি দিচ্ছিলেন। এ ছাড়া সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ছবি দেওয়ায় বারবার ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় তিনি ছাত্রলীগের নেতা মাহবুরের এক মুরব্বির কাছে বিচার দিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাজারে আওয়ামী লীগের লোকজন তাঁকে ও তাঁর চাচাকে মারধর করেন। পরে বাজারে আটকে রেখে তাঁর বাবার সমিতি কার্যালয় ভাঙচুর করেন।

বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও তঁাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা নতুন নয়। সাম্প্রতিক অবরোধের সময়ে এই মামলার সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু বাগেরহাটের চিতলমারীতে যা ঘটেছে, তা আইনের শাসনের চূড়ান্ত ঘাটতির বিষয়টিকেই তুলে ধরছে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো দলের সমাবেশে কারও যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ নেই। তারপরও সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর করেছেন। এর প্রতিকার চাওয়ার কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েই তাঁরা ক্ষান্ত হননি, উল্টো আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী বলেছেন, জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটু শায়েস্তা করেছে। আইনের শাসনের প্রতি যাঁদের ন্যূনতম আস্থা আছে, তাঁরা এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। আরেক দল লোক যদি ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে চড়াও হন, তাহলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে?

বাগেরহাটের চিতলমারীর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাজ কোনো দলের অপকর্মকে প্রশ্রয় দেওয়া কিংবা কোনো দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করা নয়।