সরকারি গণপরিবহন ট্রেনের সেবা বাড়াতে ও কালোবাজারি বন্ধ করতে টিকিট বিক্রি অনলাইনভিত্তিক করা হয়। সেবা বাড়ানোর চেয়ে বরং নতুন আরেক ভোগান্তিই যুক্ত হয়েছে সেখানে। কালোবাজারিরা দক্ষ হওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা টিকিট কাটতে গিয়ে টিকিট পাচ্ছেন না। অথচ নতুন ব্যবস্থায় অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকই অযৌক্তিকভাবে লাভ করছে।
ট্রেন যাতায়াতের প্রায় ৭১ শতাংশ টিকিটই বিক্রি হয় অনলাইনে। বাকি যে ২৯ শতাংশ টিকিট কাউন্টারে বিক্রি হয়, এর প্রায় সবই হয় কম গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনযাত্রার ক্ষেত্রে। এ ছাড়া কাউন্টারে টিকিট কাটার সময় মোবাইল ফোনে ওটিপি নম্বর আসার পর গ্রাহক টিকিট পান। সেখানেও টিকিট কাটতে বেশ সময় লাগছে। তা ছাড়া অনলাইন–সুবিধা না থাকা নিম্ন আয়ের বিপুলসংখ্যক যাত্রী কমে গেছে। বিগত এক দশকে আন্তনগর ট্রেনের প্রতি জোর দেওয়ায় প্রায় ১০০ লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে সাশ্রয়ী গণপরিবহন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে নিম্নবিত্ত, দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের বড় একটা অংশ।
কালোবাজারি বন্ধে অনলাইনে টিকিট বিক্রির সেবা চালুর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরপরও কি কালোবাজারি ও অনিয়ম ঠেকাতে পেরেছে রেলওয়ে? কেন অনলাইনে ‘এক মিনিটেই টিকিট শেষ’—এমন অভিযোগ সর্বত্র শুনতে হয়? দিন শেষে এটি এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাভজনক ‘ব্যবসায়’ পরিণত হয়েছে। রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে পাঁচ বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহজ টিকিট বিক্রি ও বিজ্ঞাপন সব মিলিয়ে ৩০ কোটি টাকা পেত। অনলাইনে বেশি টিকিট বিক্রি হওয়ার কারণে বিজ্ঞাপনের আয় ছাড়াই তারা ৯২ কোটি টাকা বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। যদিও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলছে, পুরো ব্যবস্থা তাদের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে অনেক খরচ হয়।
সহজের সঙ্গে করা চুক্তি অনুসারে রেলের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোয় বড় ৬০টি মনিটর স্থাপন করার কথা। এসব মনিটরে ট্রেন গমনাগমন, কোচের সিরিয়াল নম্বর, ট্রেনের অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সরবরাহের কথা। চুক্তির এ রকম অনেক শর্তই তারা মানেনি বা বাস্তবায়ন করেনি।
বিগত সরকারের আমলে টিকিট বিক্রির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। সহজের আগের প্রতিষ্ঠান সিএনএসের বিরুদ্ধেও নানা অজুহাতে বিপুল টাকা তুলে নেওয়া অভিযোগ আছে। অনলাইনভিত্তিক টিকিটসেবার কারণে যদি যাত্রী কমে যায় এবং ভোগান্তি তৈরি হয়, তাহলে এটির গুরুত্বই কী থাকল?
অনলাইন সেবা বাড়ানোর পাশাপাশি পিছিয়ে থাকা যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখার প্রতি বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েছেন। আশা করি, রেলপথ বিষয়ক উপদেষ্টা গোটা বিষয়ের দিকে বিশেষভাবে নজর দেবেন। অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে ভোগান্তি বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ তিনি নেবেন।