দেশে উৎপাদিত কিংবা বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রায় সব ভোগ্যপণ্যেই এখন সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। গত বুধবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) উদ্যোগে আলুসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধনকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন আমদানির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের ইঙ্গিত করে বলেছেন, এটা হলে সমস্যা।
বাংলাদেশে কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল, চিনিসহ ভোগ্যপণ্য আমদানি করে থাকে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি তাদের ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক, সেসব দেশ থেকে তারা আমদানি করে। ফলে ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
আর দেশে উৎপাদিত পণ্যে সিন্ডিকেট তৈরি করে থাকেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও মজুতদার। আলুচাষিদের নিজস্ব হিমাগার নেই। সরকারও আলু সংরক্ষণের জন্য কোনো হিমাগার তৈরি করেনি। ফলে আলুচাষিরা মৌসুমের শুরুতে হিমাগারের মালিকদের কাছে কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন। আবার অনেক হিমাগারমালিক দাদন ব্যবসা করেন।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, রংপুরে চাষিদের কাছ থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনে তা হিমাগারে মজুত করেন ব্যবসায়ীরা। বস্তা কেনা, পরিবহন, শ্রমিক খরচ ও হিমাগার ভাড়ায় প্রতি কেজিতে আরও খরচ হয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ৩১ টাকা ১০ পয়সা। অথচ সেই আলু এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৭০–৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর হিমাগারে বিক্রি
হচ্ছে ৬৫ টাকায়। আলুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।
হিমাগারমালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা বলেন, আলুর দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার পেছনে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তথা হিমাগারের আলু মজুতদারেরা দায়ী। চলতি বছর কয়েক দফা বন্যা হওয়ায় সবজি উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে আলুর চাহিদা বেড়েছে। এই সুযোগে আলুর মজুতদারেরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন দফায় দফায়। ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আলুর দাম আকাশচুম্বী।
আলুর মজুত নিয়েও দুই পক্ষের হিসাবে গরমিল আছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রংপুর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১২ নভেম্বর পর্যন্ত জেলার ৪০ হিমাগারে ১২ হাজার ৫২৪ টন খাওয়ার আলু এবং ৬২ হাজার ৩৪৪ টন বীজ আলু মজুত ছিল। কিন্তু রংপুরের হিমাগারের ব্যবস্থাপকেরা জানিয়েছেন, ১৪ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত ৩৭ হিমাগারেই ১৫ হাজার ৪৫৮ টন খাওয়ার আলু এবং ৪২ হাজার ৪৫০ টন বীজ আলু মজুত ছিল।
গত মৌসুমে তাঁদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকায় কিনেছেন। গত মার্চে সেই আলু হিমাগারে রেখে বর্তমানে গড়ে পাইকারি প্রতি কেজি ৬৫ টাকা ও খুচরা বাজারে ৭০ টাকায় বিক্রি করা অস্বাভাবিক।
দামের এই আকাশ–পাতাল ফারাকের পেছনে হিমাগারমালিকদের যেমন কারসাজি আছে, তেমনি আলুচাষিদের সরকারের কাছে থেকে যে সহায়তা পাওয়া দরকার, সেটাও তাঁরা পাচ্ছেন না। সরকার নিজে যদি আলুচাষিদের কাছ থেকে সরাসরি আলু কিনে রাখত, তাহলে ভোক্তারা কম দামেই এখন আলু পেতেন। সরকার কৃষির উন্নয়নে অনেক কর্মসূচি নিয়েছে, কিন্তু গরিব আলুচাষিদের সহায়তায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
আশা করি, কৃষি অধিদপ্তর বিষয়টি ভেবে দেখবে। মনে রাখতে হবে, কেবল অভিযান চালিয়ে পণ্যের দাম কমানো যাবে না। সরকার নিজস্ব উদ্যোগে বাজারে সরবরাহ বাড়ালে এমনিতেই আলুর দাম কমে যাবে।