সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

শালিখার প্রশাসনের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

জলাবদ্ধতা এখন আর বড় শহরগুলোর সমস্যা নয়, জেলা-উপজেলা অর্থাৎ মফস্‌সলেও এ সমস্যা এখন প্রকট হয়ে উঠছে। সবখানে জলাবদ্ধতার বড় কারণ হচ্ছে স্থানীয় খালগুলো দখল ও দূষিত হয়ে যাওয়া। খালগুলো ঠিক থাকলে তা দিয়ে শুধু পানিই নেমে যায় না, এলাকার প্রকৃতি-পরিবেশকেও ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে। খাল ঘিরে গড়ে উঠতে পারে জনপরিসরও। মাগুরার শালিখা উপজেলা প্রশাসন সেটি যথার্থ উপলব্ধি করতে পেরেছে। শালিখায় একটি খাল পরিষ্কার করে প্রশাসন দারুণ প্রশংসনীয় কাজ করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ও তিলখড়ি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কানুদা নামের একটি খাল। বর্ষা মৌসুমে আরও ২২টি খালের পানি এই কানুদা খাল দিয়ে নেমে যায়। এতেই বোঝা যাচ্ছে, খালটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিবেচনায় ২০১৯ সালে কানুদা খাল পুনঃ খনন করা হয়। তবে কয়েক বছরের মধ্যে খালটি দখল করে নেয় কচুরিপানা। এর পানিও নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে মাছ ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যে বাস্তুসংস্থানও নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। তবে স্থানীয় প্রশাসন খালটি পরিষ্কার করতে এগিয়ে আসে।

উপজেলা প্রশাসনের জন্য খাল পরিষ্কারের কাজটি সহজ ছিল না। উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার, আনসার সদস্য, গ্রাম পুলিশ, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), রাজনৈতিক দলের কর্মীসহ নানা পেশার কয়েক শ মানুষ এতে যুক্ত হন। পরে এক সপ্তাহে প্রায় ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। খাল পরিষ্কারের গোটা কর্মসূচি যাঁর নেতৃত্বে হয়েছে, তিনি হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হরেকৃষ্ণ অধিকারী।

খাল পরিষ্কার করলেই হয় না শুধু, সেটিকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ বা নিয়মিত তদারক করতে হয়। নয়তো সেটি আবার দূষিত বা দখল হয়ে যায়, এমন অনেক উদাহরণ আছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে খালকে ঘিরে কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন ইউএনও। খালের দুই পাড়ে জনপরিসর গড়ে তোলা হবে। সেখানে থাকবে বিনোদন কেন্দ্র, মুক্তমঞ্চ, রান্নার জায়গা ও কটেজ।

প্রতিবছর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যাতে সেখানে বনভোজন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর জন্য খালের পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় থাকা ৮০টি পরিবারকেও অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মাছ চাষ ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নৌকা ও প্যাডেল বোট নামানোর অনুমতি দেওয়া হবে। যাতে স্থানীয় লোকজন নিজেদের প্রয়োজনেই খালটি পরিষ্কার রাখেন। আমরা আশা করব, উপজেলা প্রশাসনের এসব উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সফল হবে।

আমরা খাল পরিষ্কারের এ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত সবাইকে সাধুবাদ জানাই। শালিখা উপজেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগ গোটা দেশের অন্যান্য উপজেলার জন্যও অনুসরণীয় হয়ে উঠুক।