সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

করিমগঞ্জে রাস্তা নিয়ে সংঘর্ষ

বিরোধ মেটাতে প্রশাসন পদক্ষেপ নিক

গ্রামে গ্রামে বিরোধ নতুন কিছু নয়। তবে এ বিরোধের বিপদ হচ্ছে, যুগ যুগ ধরে বা বংশপরম্পরায় তা জিইয়ে থাকে। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে এমন বিরোধে একটি কাঁঠাল নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা থেকে সৃষ্ট সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে এ বছর। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদীর কিছু এলাকায় টেঁটাযুদ্ধের কথা কে না জানে।

এবার কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় একটি রাস্তা নিয়ে বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়ালেন দুই গ্রামের বাসিন্দারা। সেখানে দোকানপাট ও বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটও চালানো হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

করিমগঞ্জের গুণধর ইউনিয়নের ইন্দা, চুল্লী ও কন্ডবখালী—তিন গ্রামের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর পাশে চুল্লী গ্রামের চলাচলের রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে ইন্দা গ্রাম হয়ে চলাচল করেন চুল্লী গ্রামের মানুষ। বাজারে আসা-যাওয়াসহ গাড়ি নিয়ে চলাচলের জন্য সড়কটিই তাঁদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু ইন্দা গ্রামের মানুষ চান না তাঁদের গ্রাম হয়ে চুল্লী গ্রামের কেউ চলাচল করুক। চুল্লী গ্রামটি নানা দিক দিয়ে ইন্দা গ্রাম থেকে পিছিয়ে। এগিয়ে থাকার কারণে একধরনের শ্লাঘাতেও ভোগেন ইন্দা গ্রামের বাসিন্দারা।

সম্প্রতি ওই রাস্তার ওপর দিয়ে বিদ্যালয়ের সীমানাদেয়াল তোলার সিদ্ধান্ত হয়। তবে যাতায়াতের পথ রেখে সেই দেয়াল তোলার দাবি জানান চুল্লী গ্রামের লোকেরা। কিন্তু রাস্তা না রেখে স্কুলের দেয়াল তোলার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা চালান ইন্দা গ্রামবাসী। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান পর্যন্ত গড়ানোর পর সিদ্ধান্ত হয়, রাস্তা রেখেই বিদ্যালয়ের দেয়াল নির্মাণ করা হবে। এরপরও দুই গ্রামের বাসিন্দারা সংঘাতে জড়ান।

চুল্লী গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, চলাচলের রাস্তা না রেখে দেয়াল নির্মাণের প্রতিবাদ জানালে ইন্দাবাসী দা-বল্লম, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। ইন্দা গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, চুল্লী গ্রামের মানুষ আগে তাঁদের ওপর হামলা করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ জানান, চুল্লী গ্রামের মানুষ শত বছর ধরে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছেন। এই গ্রাম থেকে বাইরে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তা এটিই। গ্রামের ফসলাদি এ রাস্তা দিয়ে বাড়িতে আনা হয়। এ রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে ইন্দা গ্রামের মানুষের কী লাভ?

সংঘর্ষে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। ঘটনার পর পুলিশ সেখানে অবস্থান করছে। একই স্কুলে দুই গ্রামের শিশুরাই পড়াশোনা করে, এমন পরিস্থিতিতে তারা কী শিখবে? রাস্তাটি কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়। ফলে সেটি বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনিক ও সামাজিকভাবে নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচির মাধ্যমে সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা হোক।