সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মৃত্যুর মিছিল থামাতে তৎপর হোন

দেশের সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নের অন্যতম নিদর্শন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে।

পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়কটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। দুঃখজনক হচ্ছে, এই এক্সপ্রেসওয়েতে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। কিছুদিন পরপর সেখানে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার খবর শিরোনাম হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে।

গত ২৪ জুন চাকা ফেটে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে চালকসহ আটজনের মৃত্যু হয়। এর আগে ১৯ মার্চ একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে গেলে ১৯ জন নিহত হন। উদ্বোধনের পর এক বছরে সড়কটিতে ২৬০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং মারা গেছেন ৯৪ জন। শুধু একটি সড়কে এক বছরে এত বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি খুবই উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এক্সপ্রেসওয়েতে এ মৃত্যুর মিছিলের জন্য দায়ী চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনা, যাত্রীদের অসচেতনতা ও কর্তৃপক্ষের নামমাত্র নজরদারি। এককথায় বলতে গেলে মহাসড়কে চলাচল করার ক্ষেত্রে আইন যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না।

দেখা যাচ্ছে, আইন না মানার কারণে কিছু জরিমানা করা হলেও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। তার মানে যে মাত্রায় নজরদারি ও জরিমানা করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট নয়। এমনকি উল্টো পথে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচল ও প্রবেশ করছে। মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। তা-ও আবার চলছে উল্টো পথে। শুধু তাই নয়, ভ্যানগাড়িও চলছে এ সড়কে। এতটা বিশৃঙ্খলা নিয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি আদৌ নিরাপদ রাখা সম্ভব?

বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের এক পাশ থেকে আরেক পাশে যেতে ২১টি পদচারী–সেতু রয়েছে। কিন্তু মানুষ সেসব সেতু ব্যবহার না করে হেঁটে সড়ক পার হন। এমনকি কিছু জায়গায় সড়কের দুই পাশের কাঁটাতারের বেড়াও কেটে ফেলা হয়েছে। বাসগুলো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে এমনটি ঘটছে। এর দায় পুরোটাই যাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন বাসমালিকেরা।

তাঁদের বক্তব্য, যাত্রীরাই যেখানে নামতে চান বা যেখান থেকে উঠতে চান, সেখানেই গাড়ি থামাতে বাধ্য হন তাঁরা। এমন যুক্তি মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। আইন মেনে যদি বাস ও যানবাহন চলাচল করে এবং নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামানোর ব্যাপারে যদি তারা অটল থাকে, তাহলে যাত্রীরা তা মানতে বাধ্য হবেন।

বিভাজক থাকার কারণে এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। এরপরও কেন এক্সপ্রেসওয়েতে এত দুর্ঘটনা ও এত মৃত্যু? সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, অতিরিক্ত গতি, আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এখানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

মহাসড়কের তদারকি ও সড়ক আইন নিশ্চিত করা যাদের দায়িত্ব, সেই পুলিশ ও সড়ক কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলে তো এমন হওয়ার কথা নয়। মহাসড়কে যঁারা আইন মানতে চাইবেন না, তঁাদের আইন মানতে বাধ্য করাই তো তঁাদের দায়িত্ব। এসব দুর্ঘটনার দায়দায়িত্ব তাই তাঁদেরই নিতে হবে।

মুন্সিগঞ্জ সওজ কর্তৃপক্ষ বলছে, রাস্তার মধ্যে অপটিক্যাল ফাইবার ও বড় বড় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমে গাড়ির গতি পর্যবেক্ষণ করে নম্বরসহ রেকর্ড করা হবে।

এতে যাঁরা আইন অমান্য করবেন, তাঁদের খুব সহজেই শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা যাবে। সড়ক নিরাপত্তার কাজটি দ্রুত শুরু হোক এবং বাস্তবায়িত হোক।

বেপরোয়া বাসচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্যের কোনো সুযোগ নেই। সড়কে চাঁদাবাজিসহ যেসব অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে, তার বিহিত করতে হবে। সেই সঙ্গে যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম আরও বাড়ানো হোক।

সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে না পারলে দেশের সড়ক যোগাযোগে উন্নয়নের মাইলফলক এ সড়কের জন্য তা একধরনের ‘কলঙ্কই’ হয়ে থাকবে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।