সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সাধারণ যাত্রীরা কেন ভুক্তভোগী হবেন

জেলা-উপজেলা শহরগুলোর সড়ক দাবড়িয়ে বেড়ায় ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। যানজটের জন্য অন্যতম দায়ীও এসব যান। সাধারণ মানুষের পরিবহন হিসেবে এ যানগুলোর গুরুত্ব থাকায় সেগুলোর বিরুদ্ধে খুব বেশি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকে না।

আবার পরিবহন সংগঠনগুলোও সেখানে বড় বাধা হয়ে থাকে। এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন নয়। তবে টাঙ্গাইলের সখীপুরে যেভাবে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলছে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌর শহরের বিভিন্ন সড়কে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার আটটি স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন এলাকায় দৈনিক পাঁচ শতাধিক অটোরিকশা চলাচল করে। অনেক জায়গা থেকেও যাত্রী নিয়ে অটোরিকশা আসে স্ট্যান্ডগুলোতে।

আর উপজেলা অটোরিকশা, টেম্পো সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের নামে প্রতিদিন প্রকাশ্যে এ চাঁদা তোলা হচ্ছে। বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে প্রশাসন। এর মধ্যে সখীপুর থানার সামনে একটি স্ট্যান্ড থেকে এ চাঁদাবাজি চলে। এ চাঁদাবাজির কারণে স্থানীয়ভাবে অটোরিকশার ভাড়াও বেড়ে গেছে।

চাঁদা আদায়ের জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রতি স্ট্যান্ডে একজন করে প্রতিনিধিও নিয়োগ করা হয়েছে। চাঁদার বড় ভাগটা চলে যায় শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পকেটে। চাঁদা তোলার প্রতিনিধিরাই বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এখন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল সিকদারের বক্তব্য, ‘এ সংগঠন জেলা থেকে পাস করিয়ে আনতে খরচ হয়েছে। এ ছাড়া এই চাঁদার টাকা দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, পৌর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়ের মাসিক ভাড়া পরিশোধ করা হয়। এ ছাড়া ১৫ আগস্ট, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ নানা অনুষ্ঠানের খরচ দিতে হয়। দুর্ঘটনায় পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত চালকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে চাঁদার ওই টাকার তেমন একটা অংশ আমাদের পকেটে থাকে না। বেশি টাকাই বড় নেতারা খেয়ে ফেলেন।’

তার মানে, গোটা বিষয়টা রাজনৈতিক। সখীপুর থানা বলছে, বর্তমান সংসদ সদস্যের নির্দেশনা পেলে চাঁদাবাজদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়ের বক্তব্য হচ্ছে, শিগগিরই চাঁদা আদায়ের শ্রমিক সংগঠনের ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে।

দেখা যাচ্ছে, নতুন সংসদ সদস্য নিজেই সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভাড়া পরিশোধ করতে কেন শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদাবাজির ওপর নির্ভর করতে হবে। এখন সংসদ সদস্য কী পদক্ষেপ নেন, সেটিই দেখার অপেক্ষা। আমরা তাঁর বক্তব্যের প্রতি আস্থা রাখতে চাই।