সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

দ্রুত নিরাপদ পরিবেশ ফেরানো দরকার

ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কার্যত ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সহিংসতা ও লুটপাটের আশঙ্কায় রাজধানীর অনেক স্থানেই দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকছে দোকানপাটগুলো। নিরাপত্তার শঙ্কা ও ভয়ের কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সরকার পতন উদ্‌যাপনে গত সোমবার রাজপথে মানুষের ঢল নামে। কিন্তু বিকেল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে লুটপাট শুরু হয়। এতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে বেশির ভাগ এলাকায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দোকানপাট বন্ধ ছিল। বিকেলের পর ধীরে ধীরে দোকান খুলতে শুরু করে। গতকাল বুধবার আরও কিছু দোকান খুললেও সার্বিক পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মিরপুর–১০, রামপুরা, উত্তরাসহ যেসব জায়গায় সহিংসতা বেশি হয়েছিল, সেসব এলাকায় বন্ধ দোকানপাটের সংখ্যা বেশি। খুচরা বাজার থেকে পাইকারি—সব পর্যায়েই এর প্রভাব দেখা গেছে। একদিকে পণ্য সরবরাহ যেমন কম, অন্যদিকে সেগুলো কেনার মতো ক্রেতার সংখ্যাও কম।

সহিংসতার কারণে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পণ্য সরবরাহব্যবস্থা এমনিতেই নাজুক ছিল। এরপর আবার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে গত তিন দিন পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলও কমে গেছে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দোকানপাটে লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। অনেক দোকানদারের কাছে দুর্বৃত্তরা চাঁদা দাবি করছে।

সহিংসতার সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়। হামলা ও আগুনের পর ঢাকার বেশির ভাগ থানায় এখন পুলিশ নেই। এই সুযোগে মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর, বছিলাসহ এক দল লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন বাসায় হামলা করে। জোরপূর্বক বাসার মূল ফটক খুলে তারা নগদ টাকা, অলংকার লুট করে নিয়ে যায়। এতে নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘দেশে যদিও এখন একজন রাষ্ট্রপতি আছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সোমবার দুপুর থেকে দেশে একটা সরকার অনুপস্থিত। সামরিক বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরায় চালুর জন্য পুলিশকে সহায়তা করতে হবে।’

দোকানমালিক ও নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে যে ভীতির জন্ম হয়েছে, সেটা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নিতে হবে। গতকাল পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব ব্যবসার স্বাভাবিক পরিবেশ চালু করা হবে।