সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পাখি শিকার

মৌলভীবাজার প্রশাসন সক্রিয় হোক

ক্যালেন্ডারে শীতকাল না এলেও কী হবে, প্রকৃতিতে শীতের আমেজ ঠিকই চলে এসেছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে শীতের আবহ বেশ ভালোমতোই টের পাওয়া যায়। আর কিছুদিন পর জাঁকিয়ে শীত পড়া শুরু করবে। হাওর-বাঁওড়-বিল পরিযায়ী পাখিতে ভরে যাবে। এর মধ্যেই কিছু পাখি চলেও আসছে।

কিন্তু আসতে না আসতেই শিকারিদের ফাঁদে পড়ছে পাখিগুলো। শীতকালে মৌলভীবাজারের হাওর এলাকায় পাখিশিকারিদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি আমাদের কারও অজানা নয়। তাঁরা আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের সর্বনাশ করছেন। কিন্তু এই পাখি শিকার কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছে না আমাদের প্রশাসন।

প্রথম আলোর সরেজমিন প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পরিযায়ী পাখিরা এখনো ওভাবে না এলেও দলছুটের মতো কিছু পাখি আসছে মৌলভীবাজারের হাওর এলাকায়। খাবারের সন্ধানে আসা পাখিরা শিকারির ফাঁদে আটকা পড়ছে। সেখানকার পথে ও হাটে এই পাখিদের প্রকাশ্যে বেচাকেনা চলছে। কাউয়াদীঘি হাওরপারের বিভিন্ন পথে ও হাটে এ রকম পাখি কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। হাটেই পাখি জবাই করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কোনো কোনো ক্রেতা। স্থানীয় কাশিমপুর বাজারেও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে কালেম পাখির মতো বিপন্ন প্রজাতির পাখি। একেকটি পাখি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে সহস্রাধিক টাকায়।

পরিবেশকর্মী রাজন আহমদের ভাষ্য, শনিবার (১১ নভেম্বর) সকালে কাশিমপুর বাজারে অনেকগুলো পাখি বিক্রি হতে দেখেছেন তিনি। কয়েকটি পাখি তাঁর সামনেই জবাই করা হয়েছে। তিনি বলছেন, ‘সে দৃশ্য এখন পর্যন্ত চোখ থেকে সরাতে পারছি না। পেশাদার-অপেশাদার শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে পাখিগুলো রক্ষা করা যাবে না।’

বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে পরিযায়ীসহ কোনো পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

কিন্তু এ আইন আদতে কাগজে-কলমেই আটকে থাকে। আদতেই যদি আইনটির প্রয়োগ হতো, তাহলে মৌলভীবাজারসহ গোটা সিলেট অঞ্চলে প্রতিবছর পাখি শিকার ও বেচাকেনার ‘উৎসব’ চলত না। পেশাদার শিকারিদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া কি এতটাই কঠিন?

আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এলাকায় এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও তরুণদের সম্পৃক্ত করে পাখি শিকার ও বেচাকেনার বিরুদ্ধে এবং পরিবেশ সংরক্ষণে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে তাগিদ দিতে হবে। নয়তো নিয়মিত বা গোপন অভিযান চালিয়েও পাখি শিকার ও বেচাকেনা বন্ধ করা যাবে না।