সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

দ্রুত তদন্ত ও বিচার হোক

গত বছর দুর্গোৎসবের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে যে হামলা হয়েছিল, তার কোনোটির বিচার শুরু না হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আগের হামলার বিচার না হওয়ার পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে নতুন করে হামলার ঘটনা উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চাঁদপুরের হামলার ঘটনায় ৫৪টি মামলা হয়। এর মধ্যে নোয়াখালীর ৩২টি মামলায় ২৪টিতে, কুমিল্লায় ১২টির মধ্যে ৬টি ও চাঁদপুরে ১০টি মামলার মধ্যে ৬টিসহ মোট ৩৬টি মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে।

বাকি ১৮টি মামলা তদন্ত পর্যায়ে আছে। অন্যদিকে গত ৯ মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৩০টির মতো হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ বছর ৯ মাসে হিন্দুদের ওপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৫৯টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এ সময় হিন্দুদের ৪৪২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে।

প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৭৮টি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো হামলা বা সহিংসতার বিচার হয়নি।

প্রতিটি হামলার পর সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত, বিচার ও অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গত এক বছরে সংঘটিত হামলার যে বিচার হয়নি, তা নয়। বিচার হয়নি ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ১২টি বৌদ্ধবিহার ও প্রায় ৩০টি বসতঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনারও।

২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংঘটিত একই ধরনের হামলা হয়। দুই ক্ষেত্রেই ফেসবুকে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই তরুণের নামে ফেসবুক পোস্টকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হলেও পরে প্রমাণিত হয়, তঁারা এ ধরনের কোনো পোস্ট দেননি।

এটি স্পষ্ট যে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর কিংবা মন্দিরে হামলার ঘটনাগুলো পূর্বপরিকল্পিত। গত বছর দুর্গোৎসবের সময় কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংসতা ঘটে, তার পেছনেও নিগূঢ় রহস্য আছে।

কুমিল্লার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, ইকবাল হোসেন নামের এক ভবঘুরে তরুণ এ কাণ্ড কেন ঘটাবেন? এর পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আছেন, যঁারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে তাকে ব্যবহার করেছেন। প্রকৃতই সেখানে কী ঘটেছে, কারা এর নেপথ্যে ছিলেন, তা খুঁজে বের করা সরকারের দায়িত্ব।

রামুর ঘটনায় সেখানকার পিপি প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর লোকজন সাক্ষ্য দিতে আসেন না বলে বিচার প্রলম্বিত হচ্ছে। কিন্তু কেন তাঁরা সাক্ষ্য দিতে আসছেন না, তাঁরা ভয়ভীতিতে আছেন কি না, সে বিষয়ে তিনি বা স্থানীয় প্রশাসন মুখ খুলছে না।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ করতে হলে বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সব মামলার দ্রুত তদন্ত ও বিচারকাজ শেষ করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সেই সঙ্গে এবারের দুর্গোৎসব যাতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।