সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পড়ে আছে স্বাস্থ্যের নতুন ভবন

কর্মকর্তাদের রেষারেষিতে মানুষ কেন দুর্ভোগে

পাটা-পুতার ঘষাঘষিতে মরিচের জান শেষ—বাংলা প্রবাদটি সত্য প্রমাণের জন্য যেন কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে স্বাস্থ্যের দুই সংস্থা। তাদের ঠেলাঠেলির কারণে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বেকার পড়ে আছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের নতুন ভবনটি। কর্তৃপক্ষ কে, তা নিয়েই এই আমলাতান্ত্রিক রেষারেষি। তাতে একমাত্র যে ‘লাভটি’ হচ্ছে, তা হলো সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যদুবয়রা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের নতুন ভবনটি দেড় বছর আগে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করতে চিঠি পাঠায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য নিজেদের সঠিক কর্মকর্তা হিসেবে দাবি করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আকুল উদ্দিন এবং তৎকালীন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল বাসার মো. আবদুল মুত্তালিব। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে দুই কর্মকর্তা চিঠি চালাচালি ও ঠেলাঠেলি করতে থাকেন।

বাস্তবতা হলো, যাঁর যাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি চালাচালি করতে করতে দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। আর ভবনটি দেখাশোনার জন্য সেখানে পরিবার নিয়ে বাস করছেন একজন ভ্যানচালক। দিন দিন নষ্ট হচ্ছে ভবনের আসবাব। অথচ পাশেই পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। সেখানে খাওয়ার পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই। আবার যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা তো রয়েছেই। সেটা ঘটলে তার দায় কে নেবে?

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ভাষ্য হলো, ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের। ঠিকাদার তাঁর কাছ থেকেই জমি বুঝে নিয়েছিলেন। আর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ভাষ্য হলো, ভবন ও জায়গাটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের। তারাই নিয়মিত জমির খাজনা পরিশোধ করত।

স্বাস্থ্যের দুই বিভাগের দুই কর্মকর্তা ‘হাইকোর্ট’ দেখানোর মতো করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা বলছেন। মাসে মাসে তাদের কাছে চিঠি লিখছেন। কিন্তু তাতে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সমাধান তো আসছে না। প্রশ্ন হলো, জমির মালিক কে আর জমির খাজনা কে শোধ করছে—সেই প্রশ্নের মীমাংসা হতে কত বছর অপেক্ষা করতে হবে?

জনগণের করের অর্থে নির্মিত একটা ভবন এভাবে পড়ে পড়ে নষ্ট হতে পারে না। চিকিৎসক ও অসুস্থ মানুষকে কেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে স্বাস্থ্যসেবা নিতে বাধ্য করা হবে? সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহির যে দৃষ্টিকটু রকম ঘাটতি, এ ঘটনা তারই প্রতিফলন।

যদুবয়রা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের নতুন ভবনটি দ্রুত চালু করুন। স্বাস্থ্যের দুই বিভাগের ঠেলাঠেলিতে সাধারণ মানুষ কেন ভালো পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন?