সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

যশোর ও নোয়াখালীতে দখল

অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেই সুযোগকে পুরোদস্তুর ব্যবহার করে একশ্রেণির মানুষ রীতিমতো দখল উৎসবে মেতে উঠেছে। সরকারি সম্পত্তি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের লোকজনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কোনো কিছুই রেহাই পাচ্ছে না দখলদারদের শ্যেনদৃষ্টি থেকে। এ ধরনের দখলবাজি শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, ছাত্র-জনতার এত বড় আত্মত্যাগের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনও।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চিত্রা নদীর পাড়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তৈরি করা স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ৫ আগস্ট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরদিনই সেই জায়গা দখল করে চার ব্যক্তি সেখানে দোকান তোলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুই বিএনপি নেতা, এক যুবদল নেতা আর অন্যজন বিএনপির কর্মী। স্বাধীনতা চত্বর ও স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর এবং সেই জায়গায় দোকান নির্মাণ করায় উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

বিএনপি নেতা সদর উদ্দীনের ভাষ্য, জমিটা আগে খাস ছিল। ১৯৯০ সালের দিকে তিনি সরকারের কাছ থেকে স্থায়ী বরাদ্দ নেন। ২০০৬ সালে সরকার সেই জমি তাঁর কাছ থেকে নিয়ে নেয়। ৫ আগস্ট স্বাধীনতা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দেওয়ার পর কেউ যাতে দখল না করতে পারে, সে জন্য তিনি একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেছেন।

এই যুক্তি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও অসাড়। অন্য কেউ যাতে দখল করতে না পারে, তার জন্য নিজেই দখল করে ঘর তুলতে হবে? আমরা মনে করি, নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ হওয়া উচিত ৫ আগস্টের পর সারা দেশে যেসব জায়গা ও স্থাপনা দখল হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে সেগুলো দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করা। মুক্তিযুদ্ধের যেসব স্মৃতিচিহ্ন ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে, সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন।

এদিকে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার তিনতলা একটি বিপণিবিতান দখলের চেষ্টা করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ মুগ্ধর নামে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ব্যানার টাঙিয়ে দাবি করা হয়েছে, সেটা বিএনপি ও আঞ্চলিক সংগঠনের আঞ্চলিক কার্যালয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের জাতীয় বীর। তাঁদের নাম ভাঙিয়ে যাঁরা বিভিন্ন স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান কিংবা সম্পত্তি দখলে নেমেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু যশোর কিংবা নোয়াখালী নয়, দেশের প্রায় সব জেলায় দখলের দুঃখজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর জোরালো ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।