তরুণ সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু

চিহ্নিত ডাকাতেরা কীভাবে জামিন পায়

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া এলাকায় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে সেনা কর্মকর্তা মো. তানজিম সারোয়ার নির্জনের মৃত্যুর খবরটি খুবই মর্মান্তিক। তানজিম সারোয়ার ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে ২০২২ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন পেয়েছিলেন। আক্রান্ত গ্রামবাসীকে বাঁচাতে গিয়ে এ রকম একজন তরুণ সেনা কর্মকর্তার জীবনদান কেবল পরিবারের নয়, দেশেরও অপূরণীয় ক্ষতি।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, পূর্ব মাইজপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিয়েছে—এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল অভিযান চালায়। যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার এক ডাকাতকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। এরপর ওই ডাকাত সদস্য অতর্কিত তানজিমের মাথায় ও গলায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মাছ ব্যবসায়ী রেজাউলের বসতঘরে ডাকাতির প্রস্তুতির খবর আগেই ফাঁস হয়ে যায়। এ কারণে স্থানীয় লোকজন সেনা ক্যাম্পে রাতেই খবর দিয়ে রাখেন। ডাকাত দল রেজাউলের বাড়িতে হানা দিলে স্থানীয় পূর্ব মাইজপাড়া জামে মসজিদের মাইকে ডাকাতির খবর প্রচার করা হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী অভিযান চালালে সেখানে ছুরিকাঘাতে লেফটেন্যান্ট তানজিম নিহত হন।

এদিকে সেনাসদস্যরা চিরুনি অভিযান চালিয়ে তানজিম সারোয়ার হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছেন এবং তাদের কাছ থেকে দেশে তৈরি দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, বিভিন্ন ধরনের ১১টি গুলি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, একটি পিকআপ ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে মো. বাবুল প্রকাশ এ ঘটনার মূল অর্থ জোগানদাতা।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ডাকাত দলের একাধিক সদস্য মাত্র কয়েক দিন আগে জামিনে বের হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসাসহ অনেক গুরুতর অভিযোগ আছে। এসব ব্যক্তি ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সবাই ডাকাতির দায়ে গ্রেপ্তার হলেও তাদের আইনজীবীরা আদালতে জামিনের পক্ষে এই যুক্তি দেখান যে বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক মামলা করা হয়েছে। সরকারপক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হয়নি। দুর্ধর্ষ ডাকাতেরা যদি জামিনে ছাড়া না পেত, তাহলে হয়তো তরুণ সেনা কর্মকর্তাকে অকালে জীবন দিতে হতো না।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারার সংরক্ষিত বনে পাঁচ থেকে ছয়টি ডাকাত দলের শতাধিক সদস্য রয়েছে। দিনের বেলায় ডাকাতেরা গহিন বনের ভেতরে আত্মগোপনে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত গ্রামে ঢুকে লুটপাট, অপহরণ, ধর্ষণ, গরু চুরিতে নেমে পড়ে তারা। বেশির ভাগ সদস্যের আস্তানা চকরিয়ার মালুমঘাটের রিজার্ভপাড়া ও কাটাখালীর গহিন অরণ্যে। কাটাখালী ও রিজার্ভপাড়ার একটি দলের নেতৃত্ব দেয় হেলাল উদ্দিন। সে সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় জড়িত। ওই দিন ঘটনাস্থল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা হেলালকে গ্রেপ্তার করেন।

প্রশ্ন হলো চকরিয়ায় সেনা, পুলিশ, র‍্যাব ও কোস্টগার্ডের ‘কঠোর পাহারা’ ভেদ করে ডাকাতেরা কীভাবে দৌরাত্ম্য দেখায়? ক্ষমতার পালাবদলের পর কেবল কক্সবাজার নয়, দেশের আরও অনেক জায়গায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় জননিরাপত্তা মারাত্মক হুমকিতে পড়তে বাধ্য।

রাজনৈতিক মামলার দোহাই দিয়ে যাতে চিহ্নিত ডাকাত সদস্যরা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের আরও সক্রিয় হতে হবে।