সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

আয় যত বাড়ছে, সেবা তত কমছে

‘সচল, সুন্দর, সুশাসিত ও উন্নত’ ঢাকা বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২০ সালের ১৬ মে দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্ব নেন শেখ ফজলে নূর তাপস। ইতিমধ্যে চার বছর পার হয়েছে। কিন্তু নগরবাসীর সমস্যা এতটুকু লাঘব হয়েছে, বলা যাবে না।

সচল শহর মানে যানজটমুক্ত শহর। সুন্দর শহর মানে পরিচ্ছন্ন শহর। উন্নত শহর মানে সব আধুনিক নাগরিক সুবিধা পাওয়ার শহর। বাস্তবে এর কোনোটাই দেখা যাচ্ছে না।

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির মাধ্যমে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামের বাসসেবা চালু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রথম এই বাসসেবা চালু হয়। পরে আরও দুটি রুটে এই সেবা চালু করা হয়। কিন্তু বাসমালিকদের অসহযোগিতার কারণে সেটি সফল হয়নি। সিটি করপোরেশন এলাকায় কোন রুটে কী বাস চলবে, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনেরই। উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হক হাতিরঝিল থেকে গুলশান পর্যন্ত সমন্বিত বাস সার্ভিস চালু করে সফল হয়েছিলেন। বর্তমান দুই মেয়র কেন ব্যর্থ হলেন? তাঁরা কি বাসমালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে আত্মসমর্পণ করলেন?

রাজস্ব আদায়ের জন্য বাস ও মিনিবাস থেকে টোল আদায় করতে পাঁচটি এলাকার অধীনে অন্তত ৫৭টি স্থান ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি হওয়ার বিষয়টি আর লুকোছাপা নেই।

বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই তলানিতে আছে। সর্বশেষ গত ২৬ জুন প্রকাশিত ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বার্ষিক জরিপের তথ্য বলছে, বিশ্বে বসবাসের যোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান আগের বছরের তুলনায় দুই ধাপ পিছিয়েছে। এ ছাড়া দূষিত শহরের তালিকায় এবং শব্দদূষণেও ঢাকার অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে।

সরকার অন্যান্য ক্ষেত্রে আদালতের দোহাই দেয়। কিন্তু আদালতের রায় সত্ত্বেও তারা মিরনজিল্লায় হরিজনদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করেই। সিটি করপোরেশনের জন্মের অনেক আগে থেকে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানে বসবাস করে আসছে। তারা যদি এক দিন পরিচ্ছন্নতার কাজ বন্ধ রাখে, কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা কি ডিএসসিসির কর্তাব্যক্তিরা ভেবে দেখেছেন?

৮ জুলাই প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হিসাব বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংস্থাটির রাজস্ব আদায় হয় ৫১৪ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭০৩ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৭৯ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়।

৫২টি খাত থেকে ডিএসসিসি আয় করে থাকে। এর মধ্যে গৃহকর খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি, ৩৪৭ কোটি টাকা আয় করেছে। কিন্তু যাঁরা করদাতাদের নাগরিক সুবিধা কেন শূন্যের কোঠায়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ভরাট হওয়া খালগুলো পুনরুদ্ধারে বড় বড় আওয়াজ তোলা হলেও কাজ খুব এগোয়নি। ফলে মাঝারি আকারের বৃষ্টিতেও অনেক এলাকা ডুবে যায়।

ডিএসসিসি মেয়র যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রাজধানীর ভেতরে থাকা বাস টার্মিনাল শহরের বাইরে নেওয়ার একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কয়েক স্থানে টার্মিনাল নির্মাণের কাজও চলছে। কিন্তু যত দিন সেই কাজ শেষ না হবে, জনগণকে যানজটের যন্ত্রণা ভোগ করতেই হবে? মশা নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি ওষুধ ছিটানোর দাবি করেছে ডিএসসিসি। কিন্তু তা যে কোনো কাজে লাগছে না, গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গুর প্রকোপই প্রমাণ।