সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ভবন ধসে পড়লে তার দায় কে নেবে

গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্য খাতে প্রচুর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বললে ভুল হবে না। সেসব অবকাঠামো আসলে কতটা কাজে লাগছে, সেটিই হলো প্রশ্ন। প্রথম আলোতেই নানা সময় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ রকম অসংখ্য অবকাঠামো বা ভবন পড়ে আছে।

পড়ে থাকতে থাকতে নতুন ভবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল ভবনে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকার দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্ষেত্রে।

হাসপাতাল ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদের রড বের হয়ে আছে। বিমের বেশির ভাগ জায়গায় ফাটল ধরেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে শয্যা ও মেঝে ভিজে যায়। রাজধানীর অদূরে ঢাকা জেলার একটি উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালের এমন দুরবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

হাসপাতালটি ৫০ শয্যা হলেও ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় সেখানে ১৯ শয্যায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী। এখানে শুধু রোগী ও রোগীর স্বজনদের নয়, প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতে হয় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের। যেকোনো মুহূর্তে ভবন ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা—এ আশঙ্কায় থাকেন সবাই।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দোতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক দশকেও সংস্কারের নামগন্ধ ছিল না। ৪৪ বছর পর ২০০৯ সালে ভবনটি শুধু একবার সংস্কার করা হয়।

পরবর্তী সময়ে প্রায় তিন বছর আগে ভবনটির নারী রোগীদের জন্য ওয়ার্ডটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ। দোতলায় নারী ওয়ার্ডের ফটকে ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখাসংবলিত লাল রঙের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হলেও এ অবস্থায় চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। রোগীর মাথার ওপরেই খসে পড়ছে পলেস্তারা। চিকিৎসা নিতে এসে উল্টো আহত হতে হচ্ছে রোগীদের।

দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জসিমউদ্দিন বলেন, তাঁর জানামতে ভবনটি নতুনভাবে নির্মাণের জন্য দরপত্রপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। আমরাও তাঁর মতো আশাবাদী হতে চাই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে নতুন ভবনের কাজ শুরু ও শেষ হওয়া সময়সাপেক্ষ, তত দিন পর্যন্ত কি দোহারের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে? বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার দায় কে নেবে? নতুন ভবন হওয়ার আগপর্যন্ত বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা ভাবা উচিত বলে আমরা মনে করি।