ছোট ভূখণ্ডের তুলনায় বিপুল জনগোষ্ঠীর দেশ বাংলাদেশ। ফলে খাদ্যশস্য হোক আর শাকসবজি–মসলা হোক; চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করা বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। দেশে উৎপাদন হয়, এমন অনেক খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও দেখা যায় প্রতিবছরই কিছু না কিছু পরিমাণ আমদানি করতে হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা কিংবা তীব্র শীতের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘন ঘন মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও সিন্ডিকেটের কারসাজি। ফলে কোনো খাদ্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থায় খানিকটা ঘাটতি দেখা গেলেই সেটা রীতিমতো সংকটের ব্যাপার হয়ে ওঠে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের বিনা মূল্যের পেঁয়াজের বীজে চারা না গজানোর ঘটনাটিকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, রাজবাড়ীর চার হাজার কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিনা মূল্যে তিন ধরনের পেঁয়াজের বীজ সরবরাহ করে বিএডিসি। এসব বীজ কৃষকেরা বপন করলেও অধিকাংশ জায়গায় চারা গজায়নি। এতে কৃষকেরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাঁরা মানববন্ধন করে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। পেঁয়াজ বীজের জন্য বিএডিসিকে প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয় কৃষি বিভাগকে। বীজ অঙ্কুরিত না হওয়ায় সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজ উৎপাদনে সারা দেশে তৃতীয় অবস্থানে রাজবাড়ী। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ১৪ শতাংশের জোগান দেয় এই জেলা। পত্রিকান্তরের খবর বলছে, শুধু রাজবাড়ী জেলা নয়, বিএডিসি এবার সারা দেশে প্রায় ৩৪ হাজার কৃষকের কাছে ৩৪ টন পেঁয়াজবীজ সরবরাহ করেছে। তাদের বিতরণ করা ৯৫ শতাংশ বীজেই চারা গজায়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রমাণ পেয়েছে বীজে ভেজাল ছিল। প্রণোদনার বীজ পেয়ে কৃষকের মুখে যেখানে হাসি ফুটে উঠেছিল, সেই বীজই এখন হাজারো কৃষকের জন্য দীর্ঘশ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা জমি তৈরির পরিশ্রমের সঙ্গে বীজ, সার, সেচের পেছনে তাঁদের শ্রম বৃথা গেছে।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা যে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন, সেটা খুবই যৌক্তিক। কৃষকদের অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাঁরা যেন তাঁদের জমিতে নতুন করে পেঁয়াজ আবাদ করতে পারেন, সে উদ্যোগ আশু নিতে হবে।
বিএডিসির বীজ নিয়ে এমন কেলেঙ্কারি এবারই প্রথম নয়। কৃষকের এই সর্বনাশের পেছনে দুর্নীতিগ্রস্তদের যে চক্র আছে, সেটাকে উৎপাটন করাটাই এর একমাত্র সমাধান। কৃষিতে গুরুত্ব না দিলে চাপে থাকা অর্থনীতির ওপর চাপটা আরও ব্যাপক হবে।