সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

স্বাগত ২০২৪

বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বছর

স্বাগত ২০২৪। আজ খ্রিষ্টীয় নতুন বছর। ২০২৩ সালটি আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক ঘটন-অঘটনের সাক্ষী। সাফল্যের কথা বললে, গত বছর আমাদের মেয়েরা ক্রিকেটে এশিয়া কাপ জিতেছেন। ফুটবলেও তাঁরা ভালো করেছেন। আমাদের রিকশাচিত্র বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

স্বীকার করতে হবে, এ বছরের আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের জনজীবনেও অভিঘাত ফেলেছে। এর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে টান পড়া এবং ডলার–সংকট অর্থনীতিকে নতুন করে ঝুঁকিতে ফেলেছে। গত বছর মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সীমিত আয়ের মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত সবার জীবন হয় ওষ্ঠাগত। অনেকে ধারকর্জ করে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মতো আমাদেরও স্তম্ভিত করে। আমরা যখন নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছি, তখনো বিশ্বজনমত উপেক্ষা করে ইসরায়েল সেখানে নির্বিচার মানুষ হত্যা করে চলেছে, যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানিসংকট ও আমদানিনির্ভরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বেশ চাপে ফেলে, যার রেশ চলেছে গত বছরও। এ থেকে শিক্ষণীয় হলো, সমুদ্র উপকূল কিংবা স্থলভাগে মাটির নিচে যে গ্যাসসম্পদ আছে, তা অনুসন্ধান ও আহরণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।

২০২৩ সালে ঢাকায় মেট্রোরেল চালু, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন কিংবা চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল চালু অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ উন্নয়নের স্মারক হিসেবেই চিহ্নিত হবে। ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেল যোগাযোগ সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি পর্যটক টানতে সহায়তা করবে সমুদ্রবন্দরটিকে।

২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালেও দেশের রাজনীতি ছিল উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় ভরা। বছরের পুরো সময়ই রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত ছিল ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সমাবেশে। এসব কর্মসূচি মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়। কিন্তু ২৮ অক্টোবরে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা দেশকে গভীর রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দেয়। এরপরই বিএনপির মহাসচিবসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সঙ্গে পুরোনো মামলায় বিএনপির সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে দেওয়া হয় কারাদণ্ড ।

এ প্রেক্ষাপটে ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটি সব দলের অংশগ্রহণে হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা যখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তখন বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জনের আহ্বানের পাশাপাশি হরতাল, অবরোধ ও অসহযোগের মতো কর্মসূচি পালন করছে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও নৌকাধারী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ ঘটছেই। ইতিমধ্যে কয়েকজন দলীয় সমর্থক মারা যাওয়া ও অনেকের আহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের শান্তির আহ্বানও কাজে লাগছে না।

জনগণের প্রত্যাশা ছিল, রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে একটি সমঝোতা আসবে। কিন্তু নির্বাচনের আগে সেটি হয়নি। রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়ে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হয়ে যাওয়া। কিন্তু দেশের নাজুক অর্থনীতিকে সচল রাখতে, জনগণের জীবন–জীবিকা নির্বিঘ্ন রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। আমরা আশা করি, এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ইতিবাচক ভূমিকা নেবেন। দেশের একটি জনগোষ্ঠীকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাখলে সার্বিকভাবে জাতীয় জীবনে এর মারাত্মক অভিঘাত পড়া অস্বাভাবিক নয়।

২০২৩ যদি রাজনৈতিক ঝঞ্ঝার বছর হয়ে থাকে, ২০২৪ হোক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বছর। ২০২৪ সবার জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। সবাইকে খ্রিষ্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা।