ধারদেনায় কাটছে দিন

বনজীবীরা চাল কবে পাবেন, উত্তর কার জানা

সুন্দরবন শুধু প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ নয়, এ বন অসংখ্য মানুষের বেঁচেবর্তে থাকারও অবলম্বন। বনজীবী হিসেবে পরিচিত এখানকার মানুষেরা সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। মহাপ্রাণ হলেও সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ অফুরান নয়। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য যাতে সুরক্ষিত থাকে, সে জন্য জুন, জুলাই ও আগস্ট—এই তিন মাস বনজীবীদের জন্য বনের দুয়ার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ।

কিন্তু সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার বনজীবী, যাঁরা নিতান্তই দিন আনে দিন খাই করে জীবন কাটান, তাঁরা এই তিন মাস কীভাবে চলবেন? বিকল্প কোনো কাজের সুযোগ না থাকায় অভাব-অনটন আর ধারদেনা করা ছাড়া উপায়ান্তর তো নেই। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার বনের ওপর নির্ভরশীল সাড়ে চার হাজার জেলে পরিবারের দিন কাটছে অভাব-অনটনে।

অথচ সরকারি কাগজে-কলমে নিষেধাজ্ঞার তিন মাস কর্মহীন বনজীবীদের সহায়তা দেওয়ার কথা বলা আছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের তালিকাও করা হয়েছে এ বছরের শুরুর দিকে। ১০ মের মধ্যে মৎস্য বিভাগ সেই তালিকা পাঠিয়েও দিয়েছে। যদিও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বনজীবীদের তুলনায় তালিকায় নাম ওঠার সংখ্যা তিন ভাগের এক ভাগ।

এরপরও তালিকাভুক্ত বনজীবীদের তিন মাসের জন্য প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা রয়েছে। অথচ প্রায় দুই মাস যেতে চলল, সেই চালের মুখ দেখতে পাননি তাঁরা। 

সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে যা আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের জন্য তার অর্থ হচ্ছে জীবন-জীবিকার সংকট। প্রথম আলোর খুলনার কয়রা প্রতিনিধি গ্রামগুলোয় গিয়ে যে চিত্র দেখতে পেয়েছেন, সেটা এককথায় দুর্বিষহ। বেকার হয়ে পড়া জেলেদের সংসার চলছে ধারদেনায়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সংসারের ভরণপোষণ বহন করছেন তাঁরা। আবার অনেকে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছেন। যত দিন গড়াচ্ছে, সেই ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তাও কমে আসছে।

আবার চড়া সুদে ঋণ নেওয়ার অর্থ হচ্ছে সুন্দরবনের দুয়ার খুললে বনজীবীরা কাজ শুরু করলে তাঁদের আয়ের একটা বড় অংশ যাবে দেনা কিংবা ঋণের সুদ নির্বাহ করতে।

দরিদ্র, প্রান্তিক ও ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী হওয়ার কারণেই কি বনজীবীদের সঙ্গে এই অবহেলার আচরণ? সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জানিয়েছেন, বনজীবীদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কবে চালের বরাদ্দ পাওয়া যাবে, তা তিনি বলতে পারেন না। বনজীবীরা চাল কবে পাবেন, তার উত্তর কার জানা?