সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

পেঁয়াজসংকট

কেবল চুনোপুঁটি নয়, রাঘববোয়ালদের ধরুন

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরের সঙ্গে সঙ্গে পণ্যটির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৫০–৮০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কোনো কোনো বাজারে পেঁয়াজের দাম উঠেছে ২০০ টাকা পর্যন্ত। ২০১৯ সালেও ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজার বড় ধরনের সংকট দেখা দেয়।

উল্লেখ্য, ৭ ডিসেম্বর ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বন্ধ হলেও বাজারে এর প্রভাব পড়তে অন্তত কয়েক দিন সময় লাগার কথা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানানো হয়েছে, বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর মজুত আছে। বাস্তবতা হলো আমাদের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের পকেট কাটার জন্য মুখিয়ে থাকেন। সুযোগ পেলেই পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেন। কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানই পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে। তারা সিন্ডিকেট করেই দাম বাড়ালেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজসংকটকে নিয়েছেন বাড়তি মওকা হিসেবে।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক দেশ আচমকা কোনো পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে না। বিকল্প পথে আমদানির জন্য সময় দিতে হয়। ভারত যদি সেটি জানিয়ে থাকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী করেছে? তাদের নেওয়া পদক্ষেপ কি যথেষ্ট ছিল? ভারত গত ২৯ অক্টোবর প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে সরকার।

চীন, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে যে পেঁয়াজ আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম প্রথম আলোকে জানান, ২৬ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত চীন ও পাকিস্তান থেকে ৮৩০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

ভারতের রপ্তানি বন্ধের সুযোগে এক দিনে যে ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে কি সরকারের কিছুই করার নেই? ব্যবসায়ীরা এভাবে ক্রেতাসাধারণের পকেট কেটে যাবে আর সরকার নিশ্চুপ বসে থাকবে, সেটা হতে পারে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই বলেই ‘পেঁয়াজ নেই’ লেখা ব্যানার টাঙানো দোকানে মণকে মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি দায়ী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কিছু কিছু দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে। আমরা মনে করি, রাঘববোয়ালদের বাদ দিয়ে কেবল চুনোপুঁটিদের ধরলে কাজ হবে না।

প্রথম আলোয় পেঁয়াজবিষয়ক আরেকটি খবর আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ আমদানিকারক দেশ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। সে ক্ষেত্রে আমদানির ওপর নির্ভর না করে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিই জোর দিতে হবে।

কৃষকেরাও পেঁয়াজ উৎপাদন করতে উৎসাহী। সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়াতে হবে। যখন পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী, তখনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকেরা সুখবরটি দিলেন, সেখানে এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশীয় পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই।