সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ইউএনওর বিদায়ে মানুষের কান্না

আদর্শবান কর্মকর্তার অনন্য উদাহরণ

রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা সংবিধানস্বীকৃত। নাগরিকের সেবা করাই তাঁদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে সেবা নিতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে মানুষ।

জনগণের কর্মচারীর ভূমিকা পালন না করে উল্টো কর্তা হয়েই শাসাতে হামেশা দেখা যায়। এর বিপরীত উদাহরণও যে নেই তা নয়। এ জন্য আমরা একজন শেখ জোবায়ের আহমেদের দেখা পাই।

যিনি কয় দিন আগেও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছিলেন। পদোন্নতি পেয়ে তিনি অন্যত্র বদলি হয়েছেন। কিন্তু আনোয়ারা ছাড়তে গিয়ে মানুষের যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, তা এককথায় অভাবনীয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, আনোয়ারা উপজেলায় ৩ বছর ১১ মাস ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জোবায়ের আহমেদ। তিনি পদোন্নতি পেয়ে চলে যাচ্ছেন খবর শুনে অনেককেই দেখা যায় উপজেলা চত্বরে বসে কাঁদতে।

পরে ফুল ছিটিয়ে, বুকে জড়িয়ে ধরে কোনো স্বজনের বিদায়ে যেমন মানুষ পিছু পিছু অনেক দূর পর্যন্ত এসে বিদায় দেন, জোবায়ের আহমেদের বিদায়েও তেমনই করেন আনোয়ারার অনেক বাসিন্দা। এমন ভালোবাসা পেয়ে নিজে চোখ ভেজান জোবায়ের। একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য মানুষের এমন ভালোবাসার চেয়ে বড় অর্জন আর কী হতে পারে!

কেন জোবায়ের আহমেদ অন্য অনেক সরকারি কর্মকর্তার তুলনায় আলাদা হলেন? স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ইউএনও হিসেবে তিনি যখন দায়িত্ব পালন করেছেন, তখন তাঁর হাসিমুখ দেখে সবাই ভরসা পেতেন, কথা বলার সাহস পেতেন।

ফোনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরাই কোনো সমস্যা নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তিনি সবাইকে সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। এমনও দেখা গেছে, নিজের দায়িত্বের বাইরে গিয়েও মানুষের ভোগান্তি দূর করেছেন। জোবায়ের আহমেদের নেতৃত্বে তিন বছরে দুবার জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রমে দেশসেরা উপজেলা হয়েছে আনোয়ারা। অবকাঠামো নির্মাণ বা উন্নয়ন ইউএনওর দায়িত্ব না হওয়া সত্ত্বেও উপজেলা সদরে করেছেন পাঠাগার, ব্যায়ামাগার, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, মিনি শিশুপার্কসহ আরও অনেক কিছু।

করোনা মহামারির সময় ত্রাণ বিতরণ ও টিকা কার্যক্রমে তাঁর উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। নারী ও শিশুদের প্রতি আলাদাভাবে যত্নবান ছিলেন তিনি। অনেক দরিদ্র ও অসহায় বাসিন্দা তাঁর মাধ্যমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন, অনেককে কর্মসংস্থানও করেছেন তিনি।

শিশুরা যাতে শিক্ষায় ঝরে না পড়ে, তার জন্য অনেককে আর্থিক সহায়তাও দিতেন তিনি। এমনকি এলাকায় অন্যান্য কিন্ডারগার্টেন স্কুল বা ভালো স্কুল থাকতে ছেলেমেয়েদের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়েই পড়িয়েছেন।

উপজেলাটির মানুষদের মমতা ও ভালোবাসার সুতায় গেঁথেছিলেন জোবায়ের আহমেদ। সব সরকারি কর্মকর্তার জন্য তিনি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। আমরা শেখ জোবায়ের আহমেদকে অভিবাদন জানাই।