সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কী করেছে তদারককারী কর্তৃপক্ষ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীমা অক্সিজেন কারখানায় গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনাটি এতই ভয়ংকর যে আধা কিলোমিটার দূরে উৎক্ষিপ্ত লোহার পাতের আঘাতে মানুষ মারা গেছে। এ ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা।

এর আগে গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের কেশবপুরে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হন ৫০ জন। এই কারখানা থেকে সীমা অক্সিজেন কারখানার দূরত্ব পৌনে এক কিলোমিটার। বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর সীতাকুণ্ডের ভারী শিল্প এলাকায় অগ্নিনিরাপত্তাসহ কর্মসহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতে তদারক শুরু করেছিল ফায়ার সার্ভিস। এরপরও সেখানকার বিভিন্ন কারখানায় ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগে থাকা ও মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন কারখানায় গত শনিবার বিকেলে অক্সিজেন রিফুয়েলিংয়ের (সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা) কাজ চলছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এ কারখানায় তিন পালায় মোট ১৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি পালায় কাজ করেন ৫০ জন। রিফুয়েলিংয়ের কাজে থাকেন চার থেকে পাঁচজন। সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরার সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণে কারখানা ভবনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিন আর লোহার পাতের টুকরা ছড়িয়ে আছে আশপাশে। ভবনের লোহার খুঁটিগুলোও হেলে পড়েছে। সিলিন্ডারবাহী দুটি ট্রাকের একটির সামনের অংশ পুড়ে যায়। অন্যটির দরজা-জানালার কাচ উড়ে গেছে। কারখানা এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। ধসে পড়েছে কারখানার দেয়াল। বছর দুই আগে ঢাকার মগবাজার এলাকায় গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

১৯৯৭ সালে চালু হওয়া সীমা অক্সিজেন কারখানায় শিল্পে ব্যবহারের অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। দিনে ৪০০ থেকে ৪৫০ সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপন্ন হতো এ কারখানায়। গ্রুপটির রড তৈরির কারখানা ও জাহাজভাঙা কারখানার ব্যবসা রয়েছে। কারখানায় উৎপাদিত অক্সিজেন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়।

সীমা অক্সিজেন কারখানা দুর্ঘটনায় অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে এসেছে। অক্সিজেন কারখানা চালু রাখতে যে ফায়ার সেফটি প্ল্যান থাকা দরকার, সেখানে সেটি ঠিকমতো ছিল কি না, কারখানা তদারক করার দায়িত্ব যাদের, বিশেষ করে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর নিয়মিত কাজটি করেছে কি না। দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক হতাহত হলেও মালিকপক্ষের লোকজন ঘটনাস্থলে এসেছেন দুর্ঘটনার ১৯ ঘণ্টা পর।

কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কিন্তু এই কমিটির প্রতিবেদনে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে কি না, সে প্রশ্নও আছে। যেসব কারখানায় অক্সিজেনের মতো দাহ্য পদার্থ তৈরি হয়, সেখানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি বা গাফিলতি থাকলে ক্ষতিটা কত ভয়ংকর হয়, নিকট অতীতের দুর্ঘটনাগুলোই প্রমাণ।

আশা করব তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনা প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে এবং কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। অক্সিজেন কারখানাকে অন্য পাঁচটি কারখানার মতো নয়; এ ধরনের কারখানায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আশপাশের এলাকার মানুষ ও সম্পদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক; যদিও আমরা জানি মানুষের জীবনের কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না।