সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ইটভাটা

আইন অমান্য করে কেন এ অনুমতি

পরিবেশের জন্য বড় আতঙ্ক হয়ে উঠেছে ইটভাটা। আইন মেনে ও পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিয়ে ইটভাটা চালালে তাতে কোনো কথা ছিল না। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করেই গোটা দেশে চলছে বিপুলসংখ্যক ইটভাটা।

স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যেন কিছুই করার নেই। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হলেও আবার পুরোনো চিত্রই আমরা দেখতে পাই। এর মধ্যে বরগুনার আমতলী উপজেলায় যেভাবে ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে, তা এককথায় ভয়াবহ।

কারণ, ভাটাটির কাছেই চার–চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইট পোড়ানোর ধোঁয়া আর উড়ে আসা ধুলাবালুতে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে। পাঠদানের পরিবেশ তো ব্যাহত হচ্ছেই।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯ অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের ভেতরে ইটভাটা বসানোর কোনো সুযোগ নেই। সেখানে উপজেলাটির সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আমতলী এলাকায় একটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধা কিলোমিটারের দূরত্বের মধ্যে।

ভাটার দক্ষিণ দিকে একটি সরকারি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উত্তর দিকে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ–পশ্চিমে একটি মাদ্রাসা অবস্থিত। এদিকে ভাটাটির নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় থেকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে। ইটভাটা–সংক্রান্ত আইন না মেনে কীভাবে ভাটামালিককে এমন ছাড়পত্র দেওয়া হলো, সেটি আমাদের বুঝে আসে না।

এ ছাড়া স্থানীয়দের ভাষ্য, সাগর ব্রিকস নামের ভাটাটি স্থাপনের সময় এলাকার লোকজন ও বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এরপরও ভাটাটি স্থাপন করা হয়। এখন পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় সহকারী পরিচালক আবদুল হালিমের বক্তব্য, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। এমন হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তাঁর এমন বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় যে আইনটি সম্পর্কেই তিনি অবগত নন। অথচ তাঁরাই কিনা ইটভাটার জন্য ছাড়পত্র দেন। 

ভাটাটির মালিক নাজমুল আহসান বলেন, ‘বাংলাদেশে হাজারো ইটভাটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে গড়ে তোলা হয়েছে। আমার সব কাগজ (অনুমতিপত্র) আছে। আমতলীতে শুধু আমারটা না, বরগুনা জেলায় সবাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ইটভাটা করছে।

আগে তো এক মাইলের মধ্যে স্কুল গড়ে উঠত, এখন এক মাইলের মধ্যে দুইটা, তিনটা স্কুল গড়ে উঠছে।’ জনসংখ্যা বাড়ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বাড়বে স্বাভাবিক। এখন তাঁর এ কথায় বেরিয়ে এসেছে, তিনি একাই শুধু এ অনিয়ম করেননি, অন্যরাও করছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছেও তা অজানা নয়।

তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা কি অসুস্থ হতে থাকবে? এখন আমরা দেখতে চাই বরগুনায় এমন সব ইটভাটার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়।