মানসিক রোগীরা কি চিড়িয়াখানার প্রাণী

ঈদের ছুটিতে মানুষ ঘুরতে যাবে, এটিই স্বাভাবিক। পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘোরাঘুরির এই তো ফুরসত। এ সময় শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানাসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলো চাঙা হয়ে ওঠে। তাই বলে মানুষ মানসিক হাসপাতালে ঘুরতে যাবে? শুনতে অবাক লাগলেও আসলে তেমনটিই ঘটেছে। ঈদের ছুটিতে শত শত মানুষ পাবনা মানসিক হাসপাতালে বেড়াতে গেছেন। বৃষ্টির মধ্যেও সেখানে মানুষের এমন ভিড় দেখা গেছে। কিন্তু হাসপাতাল কি কোনো দর্শনীয় স্থান? পাকিস্তান আমলে তৈরি হাসপাতালটি মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু এমন একটি হাসপাতালের নিরাপত্তাব্যবস্থার এ হাল হবে কেন? বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নিরাপত্তারক্ষীদের ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিয়ে ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে ‘বেড়ানোর’ সুযোগ পেয়েছেন ‘দর্শনার্থীরা’। যদিও মানসিক রোগের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ ধরনের হাসপাতালে দর্শনার্থীদের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। দর্শনার্থী প্রবেশে রোগীদের দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাঁরা রোগীদের পরিচয় জেনে বাইরে প্রচার করতে পারেন। অন্যদিকে রোগীরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে একপ্রকার বন্দী জীবন কাটান। তাঁরা অন্যদের আনন্দ দেখলে নিজেরা ক্ষুব্ধ হতে পারেন। এতে তাঁদের অসুস্থতা বেড়ে যেতে পারে।

হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভাষ্য, তাঁরা কিছুতেই দর্শনার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে পারছেন না। কিন্তু দর্শনার্থীরা নিশ্চয়ই জোর করে সেখানে প্রবেশ করছেন না। সেই সুযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই ‘চালু’ রেখেছে। কারণ, বছরের পর বছর ধরে এমনটি ঘটে আসছে এবং তা বন্ধ করার আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে এমন হওয়ার কথা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, নিরাপত্তাকর্মীরা এভাবে যে উপরি আয় করেন, তার ভাগও কি ওপরের দিকে যায়?

মাত্র বছর পাঁচেক আগে মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ, অধিকারকর্মী ও সরকারের উদ্যোগে মানসিক স্বাস্থ্য আইন কার্যকর হয়। এই আইনের শুরুতে বলা হয়েছে, শত বছরের পুরোনো আইনের প্রাসঙ্গিকতা ও সময়োপযোগিতা হ্রাস পাওয়ায় ‘দ্য লুনাসি অ্যাক্ট, ১৯১২’ রহিত করা হলো। আরও বলা হয়েছে, মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, মর্যাদার সুরক্ষা, সম্পত্তির অধিকার ও পুনর্বাসন এবং সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা এই আইনের উদ্দেশ্য। দেখা যাচ্ছে, আইন বদলালেও সব মানুষের মনোভাব বদলায়নি। তাঁরা মানসিক অসুস্থতা উপভোগ করতে হাসপাতালে বেড়াতে যাচ্ছেন। মানসিক রোগীরা কি চিড়িয়াখানার প্রাণী?

আদতে বাংলাদেশের বড় অংশ মানুষের কাছে, এমনকি সরকারের কাছেও মানসিক রোগীরা উপেক্ষিত। স্বাস্থ্য বাজেটেও মানসিক চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ অতি সামান্য। পরিবারও অনেক সময় মানসিক রোগীদের যথাযথ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে না। সেখানে হাসপাতালেও যদি এমন পরিস্থিতি হয়, মানসিক রোগীরা কোথায় যাবেন? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন ব্যর্থতা ও দায়িত্বহীনতা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।