সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

একজন চৌধুরী জান্নাত

অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোয় তাঁকে অভিবাদন

দেশের অর্থনীতির বিরূপ পরিস্থিতির ধাক্কা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষেরা। ওএমএসের চাল-ডালের জন্য অসহায় মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। বাড়ছে দারিদ্র্য। বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা।

এ সংকট কেন, এর জন্য কারা দায়ী—তা নিয়ে ঢের আলোচনা হয়েছে। এখন এ সংকট মোকাবিলা করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে রাষ্ট্র ও সরকারের অনেক কিছুই করার আছে। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ইতিমধ্যে সহায়তাও করা হচ্ছে। পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সমাজের নানা স্তরের মানুষকেও।

অতীতে যা আমরা বারবার দেখেছি। যেমন করোনা মহামারির সময়, এমনকি সর্বশেষ সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সময়ও। সিলেটে সে সময় খাবারদাবার নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন চৌধুরী জান্নাত রাখী (৩২)। এখনো সেই কাজটি করে যাচ্ছেন। জান্নাতের মতো অনেকেই করে যাচ্ছেন এমন সমাজসেবামূলক কাজ। অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাও তৈরি করছেন তাঁরা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চৌধুরী জান্নাতের বাড়ি। স্বামী একজন বিদ্যুৎ প্রকৌশলী। বদলি চাকরির সুবাদে এখন তাঁরা সিলেটে থাকেন। সাত বছর ধরে অসহায় মানুষের পাশে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন জান্নাত। প্রতি মাসে বাসায় কয়েক শ শিশুকে ডেকে এনে খাওয়াতেন।

এরপর শহরের বস্তি এলাকায় তাঁর কার্যক্রম শুরু করেন। সেখানে নিয়মিত মৌসুমি ফল, পোশাক, ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন। এ ছাড়া শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষাবৃত্তিও প্রদান করেন। একই সঙ্গে মাদকবিরোধী সচেতনতা তৈরিতেও তিনি কাজ করে চলেছেন।

গত জুন মাসে সিলেটে ভয়াবহ বন্যার সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন চৌধুরী জান্নাত। শুরুতে সেটি ছিল খাদ্যসহায়তা। নিজেই রান্না করে বিতরণ করতেন। পরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনেও কাজ করছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি ঘর তৈরি করেছেন। তাঁর সমাজসেবামূলক এসব কাজে স্বামী, পরিবারের সদস্য, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা আর্থিকভাবে সহায়তা করেন।

সমাজসেবামূলক কাজকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চৌধুরী জান্নাত বাবার নামে গড়ে তুলেছেন ‘নূর ফাউন্ডেশন’। এ ছাড়া তরুণদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘মাদক নির্মূল শক্তি’ নামের একটি সংগঠন। এর মাধ্যমে তিনি মাদকবিরোধী সেমিনার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন।

এককথায়, চৌধুরী জান্নাত একজন মানবদরদি মানুষ। এমন মানুষই আমাদের সমাজে বেশি বেশি দরকার। আমরা চৌধুরী জান্নাতের প্রতি অভিবাদন জানাই। আশা করি, তিনি তাঁর এ সমাজসেবামূলক কাজ সুনামের সঙ্গে নিয়মিত করে যাবেন।