সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মাঝিদের প্রতি অন্যায্য আচরণ বন্ধ করুন

যেখানে ক্ষমতাচর্চা, সেখানেই অনিয়ম। উল্টোভাবেই বিষয়টি সত্য—যেখানে অনিয়ম, সেখানেই ক্ষমতাচর্চা। উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত এ বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী যদি হন দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ, তা বেশি হতাশাজনক। গাজীপুরের টঙ্গী বাজার খেয়াঘাটে আমরা এমন দৃশ্যই দেখতে পাচ্ছি। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতার ক্ষমতাচর্চার কারণে খেয়াঘাটটির ৬০ জন মাঝি বেকার হয়ে পড়েছেন। এই দুর্মূল্যের বাজারে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন তাঁরা।

তুরাগ নদের ওপর টঙ্গী বাজারের খেয়াঘাটটি চলে আসছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। আগে দৈনিক ঘাটের খরচ বাবদ একজন মাঝির ইজারাদারকে জমা দিতে হতো ২৬০ টাকা। কিন্তু খেয়াঘাটের নতুন ইজারাদার এসে ১ জুলাই থেকে নতুন ইজারা নির্ধারণ করেন দৈনিক ৫০০ টাকা। মাঝিরা এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন নতুন ইজারাদার মানুষ পারাপারের জন্য ঘাটে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে আসেন। পাশাপাশি বন্ধ করে দেন সব নৌকা চলাচল। এতে কাজ হারিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তাঁরা।

নতুন ইজারাদার টুটুল সরকার স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতা ও ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি নতুন ইজারাদার হওয়ার পর ১২ দিন ধরে কর্মহীন মাঝিরা। শুধু তা–ই নয়, খেয়াঘাটে নৌকা পারাপারে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া হচ্ছে ৪ টাকা। এর মধ্যে ইজারাদার ২ টাকা আর নৌকার মাঝি আদায় করবেন ২ টাকা। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাঝি চাইলে ১ টাকা বেশি নেওয়ার সুযোগ আছে। সে হিসাবে ঘাটে নিয়মমাফিক ভাড়া হবে ৫ টাকা। এখন সেটি দিতে হচ্ছে ১০ টাকা।

স্থানীয় লোকজনও টুটুল সরকারের ক্ষমতাচর্চা নিয়ে অতিষ্ঠ। তাঁদের মতে, প্রতিবার ঘাট নতুন করে ইজারা দেওয়া হয়, তখন এর অর্থমূল্য বাড়ে। মাঝিদেরও দৈনিক ঘাট খরচ বেড়ে যায় তখন। সেভাবে বাড়তে বাড়তে গত কয়েক যুগে ৪০ টাকার ঘাট খরচ এখন এসে দাঁড়ায় ২৬০ টাকায়। কিন্তু এবারের ক্ষেত্রে সেই ঘাট খরচ বাড়ানো হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। নতুন ইজারা হওয়ার পরে ঘাট খরচ বাড়বে, এতে কোনো আপত্তি নেই মাঝিদের। কিন্তু যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তা কোনোভাবে ন্যায্য নয়।

খেয়াঘাটটিতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, সেটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। মাঝিদের ওপর এই জবরদস্তিরও বিহিত হতে হবে। তাঁদের পুনর্বাসন না করে বা বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা না ভেবে এভাবে এতগুলো মানুষকে পথে বসিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। আশা করি, বিআইডব্লিউটিএ ও টঙ্গী নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে।