দেশের বড় শহরগুলো অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ভুগছে। অন্যদিকে জেলা–উপজেলায় মফস্সল শহরগুলোতে নগরায়ণও বাড়ছে। কিন্তু বড় শহরগুলোর সংকট থেকে সেই অর্থে কোনো শিক্ষাই সেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে না। নানাভাবে সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে।
কিন্তু পৌর শহরগুলোতে নদী ও খালগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে, সেখানে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। আর কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া বিশৃঙ্খলভাবে ভবন ও বাড়িঘর নির্মাণ তো নতুন কিছু নয়। সিটি করপোরেশান, পৌরসভা বা অন্য কর্তৃপক্ষগুলোর এখানে অনেক কিছু করার থাকলেও সেই অর্থে তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।
এ কারণে চরমভাবে ভোগান্তি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ। যেমনটি দেখা যাচ্ছে পঞ্চগড় পৌরসভার দুটি ইউনিয়নে। সেখানে অন্তত ৭০টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কালভার্টের সামনে সীমানাপ্রাচীর ও অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর তোলায় বৃষ্টির পানি এখন নামতে পারছে না। ফলে সেখানে একটি অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পৌরসভার উত্তর জালাসী-হঠাৎপাড়া এলাকায় পঞ্চগড়-হাঁড়িভাসা সড়কের একটি কালভার্টের সামনে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সড়কের উত্তর পাশে পৌরসভার হঠাৎপাড়া ও পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া এলাকার পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
টানা বৃষ্টিতে এসব বাড়িঘরে পানি উঠে যাচ্ছে এবং সেই পানি নামতেও পারছে না। সীমানাপ্রাচীর ছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর তোলায় সেখানে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টানা বৃষ্টি হলে দুটি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পরিবারগুলোর রান্নাবান্না বন্ধ। রাতে পোকামাকড়ের ভয়ে তাদের জেগে থাকতে হয়। পানিবন্দী লোকজন কেউ কেউ উঁচু জায়গার প্রতিবেশীর বাড়িতে, কেউ আবার স্থানীয় রাজনগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে রাতে গরু-ছাগল রাখছেন।
ভুক্তভোগীদের দাবি, বিষয়টি পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও তারা সমাধানের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুনের বক্তব্য, ‘মানুষজন নিজস্ব জমিতে সীমানাপ্রাচীর ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছেন। সে ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে তেমন কিছুই করার নেই।’ তাই বলে এতগুলো পরিবার এভাবে পানিবন্দী থাকবে? জনপ্রতিনিধি হয়ে এখানে কি তাঁর কিছুই করার নেই?
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুল হক বলেন, ‘এই জলবদ্ধতা নিরসনের উপায় বের করার চেষ্টা চলছে।’ আমরা তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই। পানিবন্দী ৭০টি পরিবার দ্রুত দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাক, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।