সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বিকল্প জমি থাকতে ভবন নির্মাণ কেন

আমাদের শহরগুলো দিন দিন মাঠশূন্য হয়ে পড়ছে। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো যে মাঠ আছে, সেসবই ভরসা এখন। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জনসংখ্যার চাপের কাছে সেই গুটিকয় মাঠ যথেষ্ট নয়, তা মানতেই হবে। সেসব মাঠের ওপরও যখন আঘাত আসে, নাগরিক সমাজকে তখন সোচ্চার হতেই হয়। তেমনটি দেখা গেল সরকারি বরিশাল কলেজের মাঠ ঘিরে। স্থানীয় জনমত অগ্রাহ্য করে সেই মাঠে নির্মাণ করা হচ্ছে কলেজ ভবন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বরিশাল কলেজের এই মাঠ একটি জনপরিসর হিসেবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর একটি ঐতিহাসিক মূল্যও আছে। ওই অঞ্চলের শিক্ষানুরাগী, দানবীর ও ভারতবর্ষের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম সংগঠক অশ্বিনীকুমার দত্তের বাসভবনে গড়ে উঠেছে আজকের বরিশাল কলেজ। কলেজ উন্নয়নের নামে ১৯৯১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ অশ্বিনীকুমারের মূল বাসভবনটি ভেঙে ফেলে। কলেজের একটি পুকুর কয়েকবার ভরাট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু নগরবাসীর প্রতিবাদে পুকুরটি আর ভরাট করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন কলেজের মাঠ রক্ষার আন্দোলনে নামতে হলো নগরবাসীকে।

সোমবার নগরের অশ্বিনীকুমার হল চত্বরে কলেজের মাঠ রক্ষায় একটি কর্মসূচিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, এই মাঠ মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্তের স্মৃতিবিজড়িত। তা ছাড়া একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া, শিল্প–সংস্কৃতি চর্চার জন্য মাঠ প্রয়োজন। নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে মাঠ সংরক্ষণের দাবি জানালেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা অগ্রাহ্য করে সেখানে ভবন নির্মাণ করছে। এমনকি গত জুলাই মাসে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে কলেজের পূর্ব পাশে বিকল্প জমিতে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলে সেই সিদ্ধান্তও উপেক্ষা করা হচ্ছে। এ জন্য কলেজের একমাত্র খেলার মাঠ নষ্ট করার এই পরিকল্পনা থেকে কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সরে আসার আহ্বান জানান তাঁরা। 

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলী হোসেন হাওলাদারের বক্তব্য, ‘অনেক কষ্ট করে এই ভবন নির্মাণের বরাদ্দ আনতে হয়েছে। সৌন্দর্য কেউ নষ্ট করতে চায় না। এত বড় ভবন করার মতো কলেজের জায়গা নেই। কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। তাই এই স্থানে ভবন নির্মাণ না করার বিকল্প নেই।’

মাঠটি যাতে অক্ষত থাকে এবং কলেজ ভবনও যেন নির্মিত হতে পারে, এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছার সুযোগ আছে বলে দাবি নাগরিক সমাজের। এ ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে। পূর্ব পাশের জমিটি কিছুটা ছোট হলেও সেখানে ভবন নির্মাণ করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ভবনটি ওপরের দিকে একতলা বাড়াতে হবে। আমরা আশা করব, নাগরিক সমাজের দাবির ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হবে। এ ছাড়া তাদের এ–ও মনে রাখতে হবে, তারা আইন ভঙ্গ করছে। এখন তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই দেখার বিষয়।