সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

অবৈধ স্থাপনা দ্রুত উচ্ছেদ করুন

পার্ক, উদ্যানে পাকা স্থাপনা নির্মাণ ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চালুর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু রাজধানী শহর থেকে শুরু করে একেবারে সিলেটের হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পর্যন্ত তেমনটিই আমরা দেখছি। ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সরকারি প্রকল্পে বাণিজ্যকরণ করা হচ্ছে।

গাছপালা কেটে অনেক পাকা স্থাপনাও উঠে গেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে কোনো কাজ হয়নি। বাহাদুর শাহ পার্ক নিয়েও সম্প্রতি নাগরিক সমাজের আন্দোলন আমরা দেখেছি। এরপরও পার্ক ও উদ্যানকে বাণিজ্যকরণের দিকেই মনোযোগ কর্তৃপক্ষগুলোর।

চুনারুঘাটে দেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান সাতছড়ি বনেও উঠে গেছে পাকা স্থাপনা। উদ্যানের ভেতরেই রেস্তোরাঁর ব্যবসা চালু করতে সেসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এমন কর্মকাণ্ড জাতীয় উদ্যানটির জন্য অবশ্যই আত্মঘাতী। আমরা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

দেশের ১৮টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অন্যতম সাতছড়ি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলও। প্রায় ৬০০ একরের উদ্যানটি অনেক পশুপাখির অভয়ারণ্য। প্রথম আলোর সরেজমিন প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঢাকা-সিলেট পুরোনো মহাসড়কের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের একটি ছড়ার পাশে ৪ শতাংশ জমিতে পাকা দুটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

নির্মাণাধীন ভবন দুটির আগে থেকে আরও একটি ঘর নির্মাণ করে রেস্তোরাঁ ব্যবসার জন্য ভাড়া দেয় বন বিভাগ। সেখানে আরও দুটি দোকানঘর আছে। যদিও বন বিভাগ স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

সরকার আইন করে জাতীয় উদ্যান করা হয়েছে, এমন বনে কোনো দোকান, ‘কটেজ’ বা হোটেল নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছে। স্থাপনা নির্মাণকারীদের বক্তব্য হচ্ছে বন বিভাগ ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বন্য প্রাণী সহব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) অনুমতি নিয়ে তাঁরা জাতীয় উদ্যানে পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। এখানে রেস্তোরাঁর ব্যবসা করার জন্য তাঁরা ভবন নির্মাণ করছেন।

একই স্থানে আগের দোকানঘর দুটিও বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে। উদ্যান সহব্যবস্থাপক কমিটিও বিষয়টি স্বীকার করেছে। এসব কর্মকাণ্ড কী করে সম্ভব?

বন বিভাগ ও উদ্যানের কমিটি কি সরকারের আইন সম্পর্কে জানে না? তারা যদি এ কর্মকাণ্ডের অনুমতি দিয়ে থাকে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। যারাই রক্ষক, তারাই ভক্ষকের ভূমিকায় নামলে ছাড় দেওয়ার কোনোভাবে সুযোগ নেই।

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়, তিনি অভিযোগ পেয়ে স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে নির্মাণাধীন স্থাপনা, সেই সঙ্গে আইন অমান্য করে আগে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে। আশা করি সেই ব্যবস্থাই নিতে দেখব আমরা।