সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

প্রাণের প্রতি ভালোবাসা

এই মমতা আশা, আস্থা দুই-ই জাগায়

সপ্তাহজুড়েই হাজারো খারাপ খবরের ভিড়ে মন আর্দ্র করেছে অন্তত তিনটি খবর। চলন্ত ট্রেনে গর্ভপাতের শিকার এক নারীর জীবন বাঁচাতে ট্রেনের যাত্রী চিকিৎসক-নার্সসহ অন্য যাত্রী ও ট্রেনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তার তুলনা মেলা ভার। আমরা দেখতে পেলাম, সীতাকুণ্ডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট বানর চিকিৎসা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেছে। আর সিলেটে ট্রাকচালক রিপন কুমার দেব (৩৩) ও তাঁর সঙ্গী-সাথিরা সুস্থ করে তুলেছেন একটি হনুমানকে।

চিলাহাটি এক্সপ্রেসে মরণাপন্ন নারীকে সুস্থ করে তোলার উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক আমিরুল হক জাহেদী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অসুস্থ নারী ট্রেনের ঘ বগিতে ছিলেন। তিনি টিকিট চেক করছিলেন জ বগিতে। এক যাত্রী এসে তাঁকে একজনের অসুস্থতার কথা জানালে তিনি ট্রেনে কোনো চিকিৎসক, নার্স আছেন কি না জানতে চেয়ে ঘোষণা দিতে বলেন।

মুহূর্তের মধ্যে ঘ বগিতে হাজির হন চিকিৎসক, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও দুজন নার্স। গিয়ে দেখেন, ওই নারীকে পর্দা দিয়ে ঘিরে রেখেছেন অন্য যাত্রীরা। সবার আন্তরিক চেষ্টায় বিপন্ন ওই নারীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হয়ে ওঠে। আমিরুল হক বলেন, ট্রেনে ঘোষণা দেওয়ার মুহূর্তের মধ্যে সবাই সাড়া দেন। চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনেরা মুঠোফোন নম্বরও বিনিময় করেন পরবর্তী ফলোআপের জন্য।

শুধু যে মানুষের জন্যই মানুষের প্রাণ কাঁদে তা নয়; সীতাকুণ্ডের নামারবাজার এলাকার একটি খুঁটিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিচে পড়ে গিয়েছিল একটি বানর। একে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার যন্ত্রণা, তার সঙ্গে যুক্ত হয় ওপর থেকে নিচে পড়ে যাওয়ায় শরীরের নানান জায়গায় আঘাতের কষ্ট ও গভীর ক্ষত। বানরটি পরপর তিন দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় চিকিৎসার জন্য।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এটিকে সেবা দেন। পরে বানরটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এস কাদেরী টিচিং হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রথম আলো জানাচ্ছে, বানরটি এখন ভালো আছে, স্যালাইনের সঙ্গে কলাও খাচ্ছে।

সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দরসংলগ্ন কাকুয়ারপাড় এলাকার ট্রাকচালক রিপন কুমার তো মুখপোড়া হনুমানের সেবা করতে গিয়ে দুই দিন কাজেই যেতে পারেননি। তবু তাঁর খেদ নেই। সঙ্গী–সাথিদের সহযোগিতায় শুশ্রূষা করেছেন হনুমানের। এটিও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে কোনোভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল।

চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তিনি দুই দফা ইনজেকশন দিয়েছেন হনুমানকে। শঙ্কা ছিল হয়তো হনুমানটি বাঁচবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রাণীটি বেঁচে যায়। বন্ধুবান্ধব নিয়ে এটি এখন আগের মতো গাছে চড়ছে।

প্রাণের প্রতি, প্রাণীর প্রতি মানুষের এই মমতা আশা ও আস্থা দুই-ই জাগায়। তাদের জন্য ভালোবাসা।