বন বিভাগ চাইলেই গাজীপুরের কাপাসিয়ার ‘কুহু’কে সত্যিকারের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে পারে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন (রিমি) তিন বছর ধরে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে প্রথম আলো প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার করিহাতা ইউনিয়নের পাকিয়াব গ্রামে দেশি পাখি, বন্য প্রাণী ও মাছের নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করতে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৮০ একর বনভূমিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
উদ্দেশ্য ছিল বনখেকোদের হাত থেকে বনভূমি রক্ষা, বন্য প্রাণী, পাখি ও মাছের নিরাপদ আবাস, বংশবৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখা। উদ্বোধনের সময় বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সার্বিক অভয়ারণ্যের নিরাপত্তায় বেষ্টনী তৈরির পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর পরও কোনো কাজ হয়নি।
অথচ এ অঞ্চলের শাল-গজারির বনে প্রচুর পাখির মেলা বসে। বেজি, গুইসাপ, কাঠবিড়ালিসহ নানা জাতের প্রাণীও রয়েছে এখানে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন নিয়মিত এসে গাছপালা লাগিয়ে যান। এখন যা দরকার, তা হলো বন বিভাগের নজর। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পানির উৎস না থাকায় প্রাণীদের আনাগোনা কম। বনের ভেতর পানির উৎস দরকার। যাঁরা ইচ্ছেমতো বনে ঢুকছেন ও গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের বিরত রাখা দরকার। সেই কাজগুলো হচ্ছে না। স্থানীয় সংসদ সদস্য বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়েই অভয়ারণ্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারপরও কেন বন বিভাগ সম্পৃক্ত হলো না, এ এক বিস্ময়।
এমনিতেই গাজীপুরের শাল-গজারির বন ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। প্রথমে চার লেনের সড়ক গড়তে বন কেটে সাফ করা হয়েছে। ক্ষমতাবান লোকজনও বনের জমি দখল করে ইচ্ছেমতো কলকারখানা গড়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এসব নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। তবু শেষ রক্ষা হয়নি। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশের বন বিভাগ বন পরিস্থিতি নিয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা করে। ওই সমীক্ষায় বন ছিল ৩২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ১৪ বছর পর তা কমে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৮৬। এখন এই হার আরও কমেছে বলে স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা। শুধু যে বনের জমি কমেছে তা-ই নয়, এ অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য ক্ষতিতে পড়েছে। আগের মতো বন্য প্রাণী বা পাখির আর দেখা পাওয়া যায় না। অথচ বনভূমিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে শিল্প–কলকারখানা স্থাপনের কথা আছে আইনকানুনে।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘অভয়ারণ্যের কাজ একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা আশা করব, এই প্রক্রিয়া আর দীর্ঘায়িত হবে না।’ ‘কুহু’ যে অবস্থায় আছে, অন্তত সে অবস্থায় টিকিয়ে রাখুন। এ অঞ্চলে জনগণের প্রবেশ ও গাছ কাটা বন্ধ করুন।