সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সুনামগঞ্জ সওজ

কাজ শুরুর আগে টাকা ছাড় কার স্বার্থে

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কাছে দুই কোটি টাকা কি হাতের ময়লা? তারা তো নাটক–সিনেমার রাজা-বাদশাহদের মতো মণি-মুক্তা-মোহর ছড়াচ্ছে আর ঠিকাদারেরা তা লুফে নিচ্ছেন। প্রথম আলোর ‘কাজ শুরুর আগেই বিল পরিশোধ’ শিরোনামের প্রতিবেদন পড়লে অন্তত তা–ই মনে হয়। প্রতিবেদক লিখেছেন, বন্যায় সুনামগঞ্জের নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। দুই উপজেলার ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক সংস্কারের জন্য ৩৬ কোটি টাকার একটা প্রকল্প নিয়েছে সওজ। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিল দেওয়ার প্রস্তাব করে। গত জুন মাসে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা তারা ঠিকাদারকে দিয়ে দিয়েছে। শুধু তা–ই নয়, এ কাজ পেয়েছে ঢাকার দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সালেহ অ্যান্ড ব্রাদার্স’ ও ‘কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স’। আর মাঠে কাজ করছেন সিলেটের এক ঠিকাদার। সওজ অবশ্য দাবি করছে, কিছু কাজ হয়েছে। সে জন্যই তারা টাকা ছাড় করেছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদক এলাকা ঘুরে দেখেছেন, কোথাও অল্পস্বল্প মাটি ফেলার কাজ হয়েছে, কোথাও হয়নি।

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঠিকাদার কাজের শুরুতেই কিছু টাকা পেয়ে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার ধাপে ধাপে বা কাজ শেষ হলে টাকা পরিশোধ করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তির ওপর নির্ভর করে পুরোটাই। উপঠিকাদার নিয়োগও বেআইনি নয়, যদি কাগজপত্রে এমন চুক্তি থাকে। কিন্তু সুনামগঞ্জে সওজের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক নিশ্চিত করেছেন, এ ধরনের কোনো চুক্তি তাঁরা করেননি। তাহলে কোটি টাকা ঠিকাদারকে দেওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের যে ব্যয়, সে তুলনায় টাকা দেওয়া হয়েছে খুবই কম—৫ শতাংশ মাত্র। কাজটা যে বেআইনি, তা নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। 

কিছুদিন আগে সমকাল–এ সুনামগঞ্জে বন্যা–পরবর্তী উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় নিয়ে বিশদ আরেকটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেখানেও সওজ ঠিকাদারদের কাজ শুরুর আগেই টাকাপয়সা দিয়ে বসেছিল। এভাবে টাকা ছড়ানোর ঝুঁকি কী, তা জানতে কথা হয় ওয়াকিবহাল সূত্রগুলোর সঙ্গে। তারা বলে, ঠিকাদারদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের কারও কারও অসাধু যোগসাজশ থাকে। যে কয়টা টাকা প্রথমে ছাড় করা হয়, ঠিকাদার চেষ্টা করেন সেই টাকাতেই পুরো কাজ শেষ করতে। তারপর বাকি টাকা স্বার্থসংশ্লিষ্ট লোকজনের ভোগে যায়। আর বন্যা ও সামান্য বৃষ্টিতে ‘ওপরে ফিটফাট নিচের দিকে সদরঘাট’ রাস্তা বেহাল হয়। 

সুনামগঞ্জ সওজের কাছে প্রায় দুই কোটি টাকার কোনো মূল্য না–ও থাকতে পারে। তবে এই টাকার মালিক জনগণ। ঠিকাদারকে টাকা পাইয়ে দিতে সওজের এত তোড়জোড় কেন, তা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিন।