পাসপোর্ট অফিসে বিড়ম্বনা

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সরকারি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহানোই বুঝি এ দেশের মানুষের নিয়তি। বিশেষ করে পাসপোর্ট অফিসের ভোগান্তির কথা ঘুরেফিরেই উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষকে সেবা দেওয়া অবশ্যই চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু ধাপে ধাপে কাজ সারতে কয়েকবার পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয় বলে এখানে একটি দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। অনেকটা প্রকাশ্যে চক্রটি তাদের তৎপরতা চালায়। বড় শহরগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য অনেকটা কম থাকলেও আঞ্চলিক অফিসগুলোতে তাদের প্রভাব সীমাহীন। যার নমুনা আমরা দেখতে পেলাম মুন্সিগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে সেবা নিতে এসে এক তরুণকে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ করা হয়েছে। মারধরের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন পাসপোর্ট অফিসের একজন অফিস সহকারী ও একজন আনসার সদস্য। পাসপোর্ট অফিসটিতে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে সেখানে এখন সেবা নিতে এসে মারধরের শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। এ ঘটনায় এটিও স্পষ্ট হয় যে পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা বা কর্মচারীর যোগসাজশেই এই দালাল চক্র নিজেদের অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।

পাসপোর্ট অফিসে খুবই পরিচিত দৃশ্য হচ্ছে সকাল থেকে দীর্ঘ সময় ধরে লম্বা লাইনে সেবা নিতে দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ। সেখানেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সেরে দেওয়ার বিশেষ প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয় দালাল চক্র। কিছু মানুষ তাদের দ্বারস্থও হয়। এতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ে। এমন একজন ভুক্তভোগী তরুণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কক্ষে ঢুকতে পারছিলেন না। অথচ দালাল চক্রের সদস্যসহ প্রভাবশালীরা কক্ষের ভেতরে ঢুকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ সেরে ফেলতে সক্ষম হচ্ছিলেন। বিষয়টি কারও পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ওই তরুণও সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদে কক্ষের দরজায় ধাক্কা মারেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে কক্ষের ভেতরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। প্রথমে কিলঘুষি ও একপর্যায়ে জুতাপেটা করা হয়। সে সময় সেখানে উত্তেজনা ও হৈ–হুল্লোড় পরিস্থিতিও তৈরি হয়। যদিও বিষয়টিকে অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হালকা করেই দেখছেন।

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুসাইন মুহাম্মদ আল জুনায়েদ বলেন, কোনো সেবাপ্রত্যাশীর সঙ্গে পাসপোর্ট কার্যালয়ে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী মারধর তো দূরে থাক, দুর্ব্যবহারও করতে পারেন না। যদি এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন দেখার অপেক্ষা তিনি কী করেন। আমরা আশা করব, তিনি মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে দালালমুক্ত করবেন এবং এই চক্রের সঙ্গে অফিসের যঁারা যুক্ত, তঁাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।