সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যান

পার্কের জায়গায় কেন মার্কেট হবে

ঢাকার ব্যস্ততম ফার্মগেট এলাকায় অবস্থিত আনোয়ারা উদ্যানে স্টেশন প্লাজা নির্মাণের উদ্যোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফার্মগেট ও এর আশপাশে অন্য কোনো উদ্যান কিংবা খেলার মাঠ না থাকায় আনোয়ারা উদ্যানই ছিল এই এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা। শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা কিংবা বয়স্কদের হাঁটাহাঁটির জন্য এটি বেশ পরিচিত জায়গা ছিল। সেই উদ্যান এখন আর আগের চেহারায় নেই। তার চেয়ে বড় কথা, এর অস্তিত্বই হুমকির মুখে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের মালিকানাধীন আনোয়ারা উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের দায়িত্বে ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে উদ্যানটিকে মেট্রোরেলের প্রকল্প অফিস ও নির্মাণ উপকরণ রাখার কাজে ব্যবহার করে আসছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল)। উত্তরা-মতিঝিল (এমআরটি-৬) মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। বলা হয়েছিল, নির্মাণকাজ শেষে পার্কটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা না করে উল্টো সেখানে মেট্রোরেলের স্টেশন প্লাজা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে ডিএমটিসিএল। এখানে বিপণিবিতান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফিশপ, বিনোদনকেন্দ্রের মতো বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা বলছে ডিএমটিসিএল। এরই মধ্যে কিছু অবকাঠামো নির্মাণও করা হয়েছে।

আনোয়ারা উদ্যানে দুই শতাধিক গাছ ছিল। মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর সব গাছ কেটে ফেলা হয়। একটা সময় পার্কে বসে মানুষ বিশ্রাম নিতেন, আড্ডা দিতেন। সকালে অনেকে ব্যায়াম করতেন। মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর সেখানে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না। এখন বাণিজ্যিক কারণে এখানে স্টেশন প্লাজা নির্মাণ করা হলে এই পার্ক চিরতরে হারিয়ে যাবে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ১৮ মে এক সংহতি সমাবেশ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রাজধানীর আনোয়ারা উদ্যান ছাড়তে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উদ্যান না ছাড়লে অবস্থান ও ঘেরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ‘ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলন’ এ সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে।

নাগরিকদের এই দাবি যৌক্তিক—এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। একটি শহরের মোট আয়তনের কমপক্ষে ২০ শতাংশ জায়গা সবুজ ও উন্মুক্ত থাকার কথা। ঢাকায় এ রকম জায়গা আছে ৭ শতাংশের কম। লাগামহীন দখল-দূষণের শিকার ঢাকা প্রায় সম্পূর্ণ ইটপাথরের এক জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এসবের ফলাফল হিসেবে ঢাকা বসবাসের প্রায় ‘অযোগ্য’ হয়ে পড়েছে। বাসযোগ্যতা বিষয়ে আন্তর্জাতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৭তম।

ঢাকা সিটি করপোরেশনও চাইছে আনোয়ারা উদ্যানকে উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে। ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, উন্মুক্ত স্থানগুলোর আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার ২২টি পার্ক ও খেলার মাঠ সংস্কার করা হচ্ছে। আনোয়ারা উদ্যানও এই উন্নয়নের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, ফার্মগেটে স্টেশন প্লাজা বা শপিং মলের কোনো প্রয়োজন নেই। এমনিতেই সেখানে অনেক শপিং মল রয়েছে। কিন্তু এলাকাটিতে কোনো উন্মুক্ত জায়গা নেই। খেলার মাঠ নেই। এখানে স্টেশন প্লাজার চেয়ে পার্ক বেশি জরুরি। আমরা মনে করি, পার্কের জায়গায় শপিং প্লাজা নির্মাণের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে।

আনোয়ারা উদ্যানকে নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য আবেদন জানালেও এখন পর্যন্ত ডিএমটিসিএলকে এসব জায়গা স্থায়ীভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি গণপূর্ত অধিদপ্তর। আশা করি, তারা এ জায়গায় স্টেশন প্লাজা নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে এবং আনোয়ারা উদ্যানকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।