শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আর কত অবহেলিত থাকবে

দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোতে নতুন নতুন ভবন উঠছে। পুরোনো পাকা ভবন ভেঙে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উঠেছে নতুন অবকাঠামো। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েক দশকে একাধিকবার নতুন ভবন পেয়েছে, এমন উদাহরণও অনেক। তার বিপরীতে কোনো ভবন ছাড়াই একেবারেই জরাজীর্ণ অবস্থায় পাঠদান চলছে, এমন পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আছে। যেমন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার দুর্গম এলাকায় একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরেও কোনো ভবন নির্মাণের বরাদ্দ পায়নি। ৩৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলেও ঝুঁকিপূর্ণ মাটির ঘরেই চলছে পাঠদান। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সখীপুরের হাতীবান্ধা ইউনিয়নের হতেয়া গ্রামে ১৯৭৪ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় মওলানাপাড়া সালাফিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা।

টিনশেডের একটি মাটির ঘর দিয়েই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু। ১১ বছর পর ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্ত হয় মাদ্রাসাটি। আশপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো উচ্চবিদ্যালয় না থাকায় এখানে বিপুল শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে। দ্বিতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০০। শিক্ষক আছেন ১৮ জন। জেলা পরিষদের বরাদ্দে দুই কক্ষের একটি টিনশেড পাকা ঘর করা হলেও, এর একটি শিক্ষকদের বসার কক্ষ এবং আরেকটি ছাত্রীদের মিলনায়তন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর ৭০ হাত লম্বা জরাজীর্ণ একটি মাটির ঘরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় প্রযুক্তিগত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একই কারণে নতুন নিয়োগ পাওয়া কোনো শিক্ষকও এখানে যোগদান করতে চান না।

উপজেলায় এমপিওভুক্ত ২৮টি মাদ্রাসার ২৭টিতেই পাকা ভবন রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোতেই পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নেই। অথচ বিপুল শিক্ষার্থী নিয়েও পাকা ভবন থেকে বঞ্চিত হয়েছে পুরোনো মাদ্রাসাটি। ২০২০ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য একটি ভবন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাতেও কিছু হয়নি। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘ঘরের টিনের চাল মরচে ধরেছে, মাটির দেয়ালও ফেটে গেছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সব সময় শঙ্কায় থাকি।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও মাদ্রাসাটিতে পাকা ভবনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘উপজেলায় এই একটিমাত্র মাদ্রাসাতেই মাটির ঘর আছে।

মাদ্রাসাটি ওই দুর্গম এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ভালো ভূমিকা রাখছে।’ তাহলে কেন মওলানাপাড়া মাদ্রাসায় ভবনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আর কত অবহেলিত থাকবে?