সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মন্দিরের চাল নিয়ে সিন্ডিকেট

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

বছর ঘুরে আবারও ফিরে এল বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ইতিমধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকা থেকে এলাকায়, মন্দির থেকে মন্দিরে। সুষ্ঠুভাবে পূজা উদ্‌যাপনের জন্য মন্দির ও মণ্ডপে আর্থিক বরাদ্দসহ নানাভাবে সহায়তা দিয়ে থাকে সরকার।

সেখানে আছে চাল বরাদ্দও। মূলত সেই চাল বিক্রি করে এর টাকা পূজা উদ্‌যাপনে খরচ করা হয়। তবে মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় বরাদ্দকৃত চাল নিতে পারছে না সেখানকার মন্দির কমিটিগুলো। চাল বিক্রির অর্থ ঠিকই পাচ্ছে তারা, কিন্তু বাজারদর থেকে অনেক কমে।

কারণ, সেখানে ঢুকে গেছে মধ্যস্বত্বভোগী। আর তাঁরা হচ্ছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের সঙ্গে আছেন খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের যোগসাজশ। এ সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মন্দিরগুলো।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রতিবছরের মতো এবারও পূজার খরচ হিসেবে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জেলার প্রতিটি মন্দিরের জন্য ৫০০ কেজি করে চালের চাহিদাপত্র উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়।

নিয়ম অনুযায়ী চাহিদাপত্রের বিপরীতে মন্দিরগুলোর কমিটিকে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি ঘটছে না। মানিকগঞ্জের সব উপজেলায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা মন্দির কমিটিকে চাপে ফেলে কম দামে সেই চাল কিনে নিচ্ছেন। চালের কেজি ৪০ টাকা হলে সেই চাল ২৮ থেকে ৩১ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেই হিসাবে জেলায় পূজার সরকারি অনুদান থেকে ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

আমরা অবাক হই, প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় এমন অনিয়ম হয়ে আসছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনেরও অজানা নয়। তার মানে মন্দির কমিটিকে প্রকৃত বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করাই এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে কি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? নাকি এ অনিয়মের ভাগও তাঁদের পকেটে যায়। আরও গুরুতর ব্যাপার হচ্ছে, খাদ্যগুদামের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এ কর্মকাণ্ড ঘটছে। কেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, আমরা জানতে চাই।

মন্দিরের চালের ওপর কেন চোখ পড়ল ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের নেতা-কর্মীদের? সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি এ কেমন অবিচার? গোটা দেশে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের অপকর্ম আমরা প্রতিনিয়ত দেখে আসছি।

পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের আশকারায় তাঁদের দৌরাত্ম্যের সীমা ছাড়িয়েছে বলা যায়। এখন মানিকগঞ্জে মন্দিরের চাল নিয়ে অনিয়মেও কি তাঁরা ছাড় পাবেন?