সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সুন্দরবনের বাঘ পাচার

সরকারি কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার বড় দৃষ্টান্ত

সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার শুধু বন্য প্রাণীই নয়, জাতীয় পশু হিসেবে সেটি আমাদের জাতীয় অহংকারের বিষয়ও। কিন্তু দেশের বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় এই বাঘ অন্যতম। সুন্দরবনের ভারতের অংশে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও আমাদের এখানে দিন দিন কমছে। দেশীয়-আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি চক্রের শিকার হতে হচ্ছে এ বাঘকে। কিন্তু সেই চক্রের তৎপরতা রুখতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর পদক্ষেপ হতাশাজনকই বলতে হবে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সিলেট ও ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে স্থলসীমান্ত দিয়ে নিয়মিতভাবে বাঘের হাড়সহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার হচ্ছে।

সেসব যাচ্ছে বিশ্বের ১৫টি দেশে। এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৫৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ওই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারত, চীন ও মালয়েশিয়ার এক দল চোরাচালানি। আর এগুলোর সবচেয়ে বড় ক্রেতা কাতার, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বন্য প্রাণী গবেষণা সংস্থা প্যানথেরা এবং চীনভিত্তিক সংস্থা চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের এক দল গবেষকের দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চালানো একটি গবেষণায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ২০০৯ সালেও সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ছিল ৩০০-৫০০টি। ২০১৮ সালে তা কমে আনুমানিক ১১৪টিতে নেমে আসে। এতেই প্রকাশ পাচ্ছে, চোরাকারবারিরা কতটা ভয়াবহ ও আগ্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে।

একটি সময় সুন্দরবনে ৩০টি জলদস্যু দলের নিয়ন্ত্রণ ছিল। তাদের মধ্যে অন্তত সাতটি জলদস্যু দল প্রত্যক্ষভাবে বাঘ শিকারে অংশ নিত। সরকার জলদস্যুতা প্রতিরোধ অভিযান চালিয়ে সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা দিলেও তা নিয়ে এখন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

কারণ, সুন্দরবনে আগের সাতটির জায়গায় এখন ৩২টি বাঘ চোরাচালানি চক্র। বনজীবীদের নিয়ে বন বিভাগের স্মার্ট প্যাট্রোলিং কার্যক্রম কি তাহলে কার্যকর নয়? বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের সফলতায় আত্মতৃপ্তি পেয়ে বসেছিল বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর। তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, এখন কি এই চক্রগুলো ‘নিরাপদে’ বাঘ শিকার করে যাবে?

গবেষকেরা বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহের স্থান, প্রক্রিয়াকরণ এবং সরবরাহ কেন্দ্র, ট্রানজিট বন্দর, অবৈধ সীমান্ত পাড়ি, পাচারের স্থানসহ বাণিজ্যপথগুলো চিহ্নিত করেছেন। সেসব স্থান ও পথ ধরে ধরে অভিযান চালানো ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

চোরাচালান ঠেকাতে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। যেসব দেশে পাচার হয়, তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

সর্বোপরি বাঘ চোরাচালানি চক্রের কাউকে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যায়নি। এর ফলে দিন দিন তঁাদের তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা করতে সরকারের সদিচ্ছা এবং বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর পদক্ষেপ জরুরি।