সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

অকাল ডেঙ্গু

মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করুন

বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সময় বৃষ্টির পানি বাড়িঘর ও আঙিনায় জমে থাকে এবং সেখানে ডেঙ্গুর উৎস এডিস মশা জন্ম নেয়। কিন্তু এবার শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমেও ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, এডিস মশার প্রজননের মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের প্রথম ‘পাঁচ মাসের’ তুলনায় প্রায় ছয় গুণ।

গত বছর এ সময় ডেঙ্গুতে কেউ মারা না গেলেও এবারে ১৩ জন মারা গেছেন। সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু। কারণ, এ সময় বর্ষাকাল শুরু হয়। আর এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই সময়কে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নেওয়া হয়।

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২১ মের মধ্যে আক্রান্ত (হাসপাতালে ভর্তি হওয়া) ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১০০। এই সময়ের মধ্যে কোনো মৃত্যু ছিল না। পরের বছর ২০২২ সালেও এই সময়ের মধ্যে কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ২৪৩ জন। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ মে পর্যন্ত আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী ১ হাজার ৪৪৭ জন, যা গত বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৯৬ গুণ বেশি। আর ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৪ গুণ।

কীটতত্ত্ববিদেরা বলছেন, এখন এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যার সঙ্গে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি রয়েছে।

রাস্তা উঁচু করার ফলে নিচু হয়ে যাওয়া বাসাবাড়ির জমা পানিতেও এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে। ডেঙ্গুর এই প্রাদুর্ভাব কেবল ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নরসিংদী, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরায়ও সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।

যখন ঢাকা শহরে উদ্বেগজনক হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তখন সিটি করপোরেশন কী করছে? প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অংশীদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের জন্য ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের চাওয়ার মধ্যেই দায়িত্ব সীমিত রেখেছে। অন্যদিকে স্কাউট ও বিএনসিসির সদস্যদের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও নতুন ওষুধ বিটিআই ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন।

অভিযোগ আছে, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা ভর্তি হলেও তাদের নাম–ঠিকানা ঠিকমতো নথিভুক্ত করা হয় না। অনেক ঠিকানাই অস্পষ্ট থাকে। সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন কর্মীদের দিয়ে রোগীদের শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস এবং নিয়মিত মশা মারার ওষুধ সরবরাহ করতে পারে। যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি, সেসব এলাকায় মশা মারার কাজও জোরদার করতে হবে। এর পাশাপাশি জারি রাখতে হবে গণসচেতনতামূলক কার্যক্রমও।

কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় বহুতল (চারতলা বা তার চেয়ে বেশি) বাড়িতে, যার হার ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এরপরই রয়েছে নির্মাণাধীন স্থাপনা (৩২ দশমিক ৩ শতাংশ)। সবচেয়ে কম এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে তিনতলা বা তার চেয়ে কম উচ্চতার বাড়িগুলোয় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে বহুতল ভবনগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।