সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ক্ষতিগ্রস্ত মাঠের দায় কে নেবে

রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে খেলার মাঠের সংকট নিয়ে নতুন করে বলার নেই। মফস্‌সল শহরগুলোতে কিছু খেলার মাঠ এখনো টিকে আছে। তবে নানা সময়ে বিভিন্ন মেলা আয়োজন করে খেলার মাঠ হিসেবে সেগুলোর উপযোগিতা নষ্ট করা হচ্ছে। এই প্রবণতা খেলার মাঠ ছাড়িয়ে স্টেডিয়ামে গিয়ে ঠেকেছে। শরীয়তপুরে জেলা স্টেডিয়াম মেলা করার জন্য ভাড়া দেয় জেলা প্রশাসন। সমালোচনার পর সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলেও মাঠের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এর দায় কে নেবে?

শরীয়তপুর শহরে কয়েক দশক আগে নির্মিত ১২ হাজার আসনবিশিষ্ট স্টেডিয়ামটিতে বছরজুড়ে ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। কিন্তু জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ একক সিদ্ধান্ত নিয়ে মাসব্যাপী মেলা করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেন।

ক্রীড়া সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনাও করেননি তিনি। এতে শরীয়তপুরের ক্রীড়াপ্রেমী সুধী সমাজে নানা সমালোচনা তৈরি হয়। গতকাল বুধবার এ বিষয়ে প্রথম আলোতে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গতকালই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলার আয়োজন বন্ধ রাখতে ও মালামাল সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। দেরিতে হলেও ভুল বুঝতে পারায় আমরা জেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই।

মণিপুরি তাঁতশিল্প জামদানি ও বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে মেলার জন্য স্টেডিয়ামটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি হিসেবে নানা স্থাপনা তৈরি করায় মাঠের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। ‘প্রাণের শরীয়তপুর’ সংগঠনের সমন্বয়ক রিয়াদ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরো স্টেডিয়ামের খেলার মাঠ তছনছ করা হয়েছে। এ মাঠ সংস্কার কে করবে? জনগণের টাকা দিয়ে জেলা প্রশাসক এর সংস্কার করবেন? তা তো হতে পারে না।’

এদিকে মেলা বন্ধের সিদ্ধান্তের পর আরেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। মেলার আয়োজকেরা বলছেন, প্যাভিলিয়ন নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধনের কাজসহ বিভিন্ন স্থাপনা বসানোর কাজে ইতিমধ্যে তাঁদের ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন সেই টাকা না পেলে তাঁরা স্থাপনা সরিয়ে নেবেন না।

স্টেডিয়ামটিতে অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ দলের খেলোয়াড়দের জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন চলে। এখন এমন পরিস্থিতিতে সে সবকিছুই বন্ধ। প্রশ্ন হচ্ছে, জেলা প্রশাসক কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে গেলেন। প্রতিবাদ করায় ও গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় ক্রীড়া সংস্থা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এটা অনভিপ্রেত। গোটা বিষয়টির জন্য কি জেলা প্রশাসনের জবাবদিহি করা উচিত নয়? আশা করি, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মাঠটি সংস্কার করা হবে।