সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মহেশখালীতে প্যারাবন ধ্বংস

জেলা–উপজেলা প্রশাসন কী করছে

খুলনা অঞ্চলের সুন্দরবনের মতোই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় রক্ষাকবচ কক্সবাজারের প্যারাবন। জেলাটির উপকূলজুড়ে একসময় সুন্দরবন ছিল। চিংড়ি চাষের দৌরাত্মে৵ সেটি অনেক আগেই ধ্বংস হয়েছে। সেখানে পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে মহেশখালী উপজেলায় প্যারাবন গড়ে তোলা হয়। সেটিও ধ্বংস করে এখন চিংড়িঘের ও লবণ চাষের মাঠ তৈরির হিড়িক দেখা যাচ্ছে। রীতিমতো ভয়াবহ পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলছে উপজেলাটিতে। সংবাদমাধ্যমে বারবার শিরোনাম হলেও সেই অপকর্ম কোনোভাবে রোখা যাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

প্যারাবন দখলকে কেন্দ্র করে মহেশখালীতে গোলাগুলি, সংঘর্ষ ও খুনোখুনিও চলছে। ২ মার্চ এমন ঘটনায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এরপরও প্যারাবন দখল থামছে না।

গত কয়েক মাসে অন্তত দুই হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে তৈরি করা হয়েছে ছোট-বড় ৪৫টির বেশি চিংড়িঘের এবং লবণের অনেক মাঠ। দুই লাখের বেশি বাইন ও কেওড়াগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতেই প্রকাশ পাচ্ছে সেখানে বন দখল ও উজাড়ের ঘটনা কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর এসব প্যারাবন সৃজন করেছিল উপকূলীয় বন বিভাগ।

স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা প্যারাবন ধ্বংসের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। তাতেও দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন আরও চার হাজার একর প্যারাবন ধ্বংসের প্রস্তুতি চলছে বলে পরিবেশকর্মীরা জানান। ‘মৎস৵জীবী সমবায়’ নামে একাধিক সংগঠন এসব প্যারাবন ধ্বংস করছে। দখলদারদের মধ্যে নাম আসছে স্থানীয় প্রভাবশালী ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের।

এই প্যারাবন দেখাশোনার দায়িত্ব বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা)। সেখানে ইকো টু৵রিজম গড়ে তোলার জন্য বেজার কাছে সেই প্যারাবনসহ বিশাল বনভূমি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে বন বিভাগ। কিন্তু কয়েক হাজার একরের প্যারাবন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেজার তেমন কোনো জনবল নেই। ৫০ জনের বেশি জনবলের প্রয়োজন হলেও আছেন মাত্র পাঁচজন। তা ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জড়িত থাকায় দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করারও সাহস পাচ্ছে না বেজা।

এই প্যারাবন রক্ষার দায়িত্ব শুধু বেজার? স্থানীয় জেলা–উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন সেখানে কী করছে? স্থানীয় সচেতন মহল প্যারাবন ধ্বংসের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করলেও প্রতিকার মিলছে না। এমনটি কেন ঘটছে? প্যারাবনটি রক্ষার দায় কি কারও নেই? এখন কি তাহলে বিশাল প্যারাবনটি ধ্বংস হওয়াই আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব?