সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

অ্যাপ ছাড়া রাইড শেয়ারিং নয়

দেশে অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং বা শরিকি যাত্রা চালু হওয়ার পর তা দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ ছিল নিরাপত্তা। এই পদ্ধতিতে যাত্রী কোথাও মোটরসাইকেলে যেতে চাইলে স্মার্টফোনে শরিকি যাত্রার সরকারি সনদপ্রাপ্ত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ ব্যবহার করে জিপিএসের (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) মাধ্যমে আশপাশে অবস্থানরত মোটরসাইকেলের অবস্থান দেখতে পান।

অ্যাপে যাত্রাস্থল থেকে গন্তব্যস্থল উল্লেখ করার পর সম্ভাব্য ভাড়াও যাত্রীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানানো হয়। যে প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ তিনি ব্যবহার করছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত মোটরসাইকেলচালক আশপাশে থাকলে তাঁর কাছে ভাড়ায় যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির আবেদন চলে যায়। এরপর চালক এসে যাত্রীকে নিয়ে গন্তব্যস্থলে রওনা হন।

এই ক্ষেত্রে যাত্রী ও মোটরসাইকেলচালক—উভয়ের ব্যক্তিগত তথ্য ও তাৎক্ষণিক অবস্থানের তথ্য অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকে।

ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে, যাত্রী বা চালক ছিনতাইকারীর কবলে পড়লে, চালক যাত্রীকে কিংবা যাত্রী চালককে হয়রানি করলে বা অন্য কোনো বিপদ ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। অ্যাপ ব্যবহার করায় চালক ও যাত্রী উভয়েই এ বিষয়ে সচেতন থাকেন যে তাঁদের নাম-পরিচয় তৃতীয় একটি নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থায় সংরক্ষিত আছে। ফলে উভয়েই আইনবহির্ভূত আচরণ থেকে বিরত থাকার বাধ্যবাধকতা বোধ করেন।

শুরুতে অ্যাপ ব্যবহার করেই মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রী—কেউই অ্যাপ ব্যবহার করতে চাইছেন না। মোটরসাইকেল এখন চুক্তির বাহনে পরিণত হয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোটরসাইকেলচালকেরা বসে থাকেন।

সেখান থেকে যাত্রীরা তাঁদের সঙ্গে দরদাম করে ভাড়া ঠিক করে উঠে পড়েন। মোটরসাইকেলচালকদের ভাষ্য, অ্যাপ ব্যবহার করলে অ্যাপ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে ২৫ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। অ্যাপ ব্যবহার করলে তাঁদের যাত্রীকে তোলার জন্য যাত্রীর কাছে যেতে হয়, কিন্তু চুক্তির ভাড়ায় যাত্রীরাই তাঁদের কাছে আসেন।

যাত্রীরাও অ্যাপ ব্যবহারের ‘ঝক্কিতে’ না গিয়ে সরাসরি রিকশার মতো ভাড়া ঠিক করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এতে মোটরসাইকেলচালক ইচ্ছামাফিক ভাড়া হাঁকাতে পারেন। যাত্রী বিপদে পড়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় যেতে বাধ্য হতে পারেন।

এ ছাড়া কোনো অসাধু ব্যক্তি বা চক্র যাত্রী সেজে চালককে মেরে মোটরসাইকেল নিয়ে সটকে পড়তে পারে। অনেক সময় চালক কোনো যাত্রীকে তুলে সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে তাঁর সর্বস্ব কেড়ে নিতে পারে। সে ধরনের ঘটনা ঘটলে অপরাধীকে খুঁজে পাওয়া পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে।

এ কারণে যাত্রী ও চালক—দুই পক্ষেরই সচেতনতা জরুরি। উভয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে অ্যাপ ছাড়া মোটরসাইকেল চলাচল অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।