সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জয়নুল সংগ্রহশালা

আধুনিকায়ন প্রকল্পে কেন অনিশ্চয়তা

জয়নুল আবেদিন শুধু একজন বিখ্যাত শিল্পীই নন, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শিল্প ও চারুকলার অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্বও। পূর্ববঙ্গের চিত্রশিল্প শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। যার কারণে তাঁর উপাধি হয় ‘শিল্পাচার্য’ এবং বাংলাদেশে একমাত্র তিনিই এ উপাধিতে জনমনে স্বীকৃত। সেই জয়নুলের সংগ্রহশালা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা থমকে আছে। বিষয়টি হতাশাজনক।

ময়মনসিংহ নগরীর পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ১৯৭৫ সালে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন। পরে সেখানে দোতলা ভবন করা হয়। এ কাজে পর্যাপ্ত জমিসহ একটি বাড়ি অধিগ্রহণ করে তৎকালীন সরকার। সংগ্রহশালাটি জয়নুল আবেদিনের নানা চিত্রকর্ম ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হয়। সংগ্রহশালায় প্রথমে ৭০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল, যার অধিকাংশ তৈলচিত্র। নজরকাড়া ছবির মধ্যে ছিল শিল্পীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণকালে অঙ্কিত ছবি, গুনটানা, নদী পারাপারের অপেক্ষায় পিতা-পুত্র ও দুর্ভিক্ষ। এখান থেকে ১৭টি অতি আকর্ষণীয় ছবি ১৯৮২ সালে চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে ১০টি ১৯৯৪ সালে আবার উদ্ধার করা হয়।

সংগ্রহশালাটিকে ঘিরে সেখানে গড়ে উঠেছে একটি উদ্যান। ময়মনসিংহ নগরীর মানুষের প্রাণ খুলে নিশ্বাস নেওয়ারও একমাত্র জায়গা সেটি। ফলে অনেক মানুষ সেখানে ভিড় করেন। সংগ্রহশালাটিতে জয়নুলের চিত্রকর্ম দেখতে দর্শনার্থীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। যে কারণে সংগ্রহশালাটি আধুনিকায়ন করার কথা থাকলেও এর কাজ থমকে আছে। ২০২২ সালের দিকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও হয়। প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা খরচে সংগ্রহশালা আধুনিকায়নের পাশাপাশি সেখানে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন করার কথা ছিল। সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশাও করা হয়, কিন্তু সে উদ্যোগ আটকে রয়েছে।

সংগ্রহশালার উপকিপার মুকুল দত্ত বলেন, ‘প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শেষে একনেক হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, এতটুকু আমাদের জানা। উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে সংগ্রহশালাটি আরও বেশি প্রাণ পাবে।’ ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্প পর্ষদের সভাপতি মো. রাজন বলেন, সংগ্রহশালায় বর্তমানে শিল্পীরা কম যান। বছরে একটি প্রদর্শনী ছাড়া যাওয়া–আসা নেই।

কারণ, সমসাময়িক সময়ে যাঁরা ছবি আঁকছেন, তাঁদের প্রদর্শনীর জন্য গ্যালারি সহজলভ্য নয় এবং খরচ বেশি। গ্যালারির মানও ভালো নয়। সমসাময়িক শিল্পীরা এখানে সহজে প্রদর্শনীর সুযোগ পেলে সংগ্রহশালাটি আরও বেশি প্রাণবন্ত হবে এবং শিল্পের বিকাশেও ভূমিকা রাখবে। এর জন্য এটি আধুনিকায়ন ও সংস্কৃতিক কমপ্লেক্সটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

গতকাল রোববার শিল্পাচার্যের ১১০তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হয়। আমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমরা আশা করব, সংগ্রহশালাটির আধুনিকায়নের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।