সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

চিলমারীর ডাকঘর

জরাজীর্ণ ভবন সংস্কার করুন

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকার ডাক ভবন সুন্দর ও নান্দনিক ভবন বলা যেতে পারে। ডাকবাক্সের আদলে তৈরি এ ভবন যে কারও নজর কেড়ে নেয়। কিন্তু সারা দেশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা ডাক বিভাগের ভবনগুলোর কী অবস্থা? এককথায় বলতে গেলে, অধিকাংশ ভবনই পুরোনো এবং এর অনেকগুলোই জরাজীর্ণ। ডাক বিভাগের সোনালি দিন যে ফুরিয়ে গেছে, সেটিই যেন প্রকাশ করে এসব ভবন। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ডাকঘরে কেউ ঢুকলে মুহূর্তেই তা উপলব্ধি করা সম্ভব।

তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগব্যবস্থার কারণে সরকারি অনেক সেবায় পরিবর্তন এলেও ডাক বিভাগ পড়ে আছে অতীতের খেরোখাতায়। সেদিক দিয়ে বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসগুলো মানুষের চাহিদামাফিক সেবা নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলা যায়। এর ফলে ডাক বিভাগ আগের তুলনায় অনেক গ্রাহক হারিয়েছে, এখনো হারাচ্ছে। এরপরও কিছু সুযোগ–সুবিধা ও সেবার জন্য মানুষকে এখনো ডাক অফিসে যেতে হয়। কিন্তু সেই অফিসে গিয়ে যদি দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে, তাহলে বিষয়টি কেমন লাগে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চিলমারী উপজেলার ডাকঘরের দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার হয়নি। এর ফলে ডাকঘরটি স্যাঁতসেঁতে ও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। উপজেলার কলেজপাড়ায় ১৯৮১ সালে এই উপ–ডাকঘর কার্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। তবে ১৫ বছর এই নতুন ভবনে কোনো কাজ হয়নি। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ভেতরের রড বের হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে পলেস্তারা খসে কর্মরতদের গায়ের ওপরও পড়ে। ডাকঘর ভবনটির বাইরে দেয়াল ঘেঁষে আবর্জনার স্তূপ। গেটের বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না, এটা একটা সরকারি কার্যালয়।

পোস্টম্যান মো. সেকেন্দার আলী বলেন, ‘আমি জোড়গাছ পোস্ট অফিস ও চিলমারী উপজেলা পোস্ট অফিস—দুই জায়গায় দায়িত্ব পালন করি। এই অফিসে ঢুকতে গেলেই ভয় লাগে। ভয়ে কখনো ছাদের দিকে তাকাই না।’ চাকরির আবেদনের খামে ব্যবহারের জন্য স্টাম্প কিনতে ডাকঘরটিতে নিয়মিত আসা এক যুবকের ভাষ্য, ভবনের ছাদের দিকে তাকালে ‘বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে ওঠে’। দীর্ঘদিন রং না করায় ভবনটি দেখতে ভূতের বাড়ির মতোও মনে হয় তাঁর কাছে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, ডাকঘরের এমন দুরবস্থা কি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে না? অবশ্যই জানে। বিভাগীয় কর্মকর্তা ও তদন্ত দল এসে কয়েকবার পরিদর্শন করে গেছে। তবে ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ডাক অধিদপ্তর করে। ইতিমধ্যে বিভাগীয় পর্যায় থেকে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ডাক বিভাগ এত সুন্দর একটি ভবন বানাল, এবার চিলমারীসহ দেশের অন্যান্য জরাজীর্ণ ডাকঘর ভবনগুলোর দিকে কি তাকানোর সুযোগ হবে তাদের?