সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ

কারখানা মার্কেট বসতবাড়ি সবই অনিরাপদ

রাজধানীর গুলিস্তানের কাছে সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ২১ জনের প্রাণহানি ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার স্থগিত রাখার পর বুধবার সকালে অগ্নিনির্বাপণ দল কয়েক ঘণ্টা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনের বেজমেন্টে বিস্ফোরণ ঘটায় ভবনের ভেতরে অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস আশঙ্কা করছে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা, আরেকটি পাঁচতলা। ওই বিস্ফোরণে কেবল অবস্থানকারীরাই নন শুধু, হতাহত হয়েছেন পথচারীরাও।

এ ঘটনায় পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যাঁদের মধ্যে অন্তত চারজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। এর আগে ৫ মার্চ সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে একটি ভবনে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন মারা যান এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণে ছয়জনের প্রাণহানি ঘটে।

একের পর এক দুর্ঘটনা প্রমাণ করে বসতবাড়ি, কারখানা কিংবা মার্কেট কোনোটাই নিরাপদ নয়। বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই সাবধান করে দিয়েছিলেন যে ঢাকা শহরের স্থাপনাগুলো ও পরিষেবা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কিছুটা তৎপরতা দেখায়। পরে সবকিছু আগের মতোই চলতে থাকে। সম্প্রতি ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় হাজার হাজার লোক মারা গেছেন। বাংলাদেশে সে রকম কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই মানুষ মারা যাচ্ছেন। আর এ ক্ষেত্রে এক সংস্থা আরেক সংস্থার ওপর দায় চাপিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে।

চট্টগ্রামে যে অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি ছিল। ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছের ভবনটিতে পুরোনো ও অব্যবহৃত গ্যাসের লাইনের ছিদ্র থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুরোনো ও অব্যবহৃত লাইনে গ্যাস জমে থাকল কীভাবে? এখানে ভবনমালিক-কর্মচারীদের অবহেলা স্পষ্ট। কারও গাফিলতির কারণে উপর্যুপরি দুর্ঘটনা ঘটবে, মানুষ মারা যাবে, তা হতে পারে না।

অতীতে এ ধরনের দুর্ঘটনায় যেভাবে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সহায়তার জন্য এগিয়ে আসতেন, এখন তেমনটি দেখা যায় না। বরং এসব প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি চলছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, উপর্যুপরি দুর্ঘটনার ঘটনা রহস্যজনক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এসব দুর্ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন। ডিএমপি কমিশনারও বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনা দুর্ঘটনা না নাশকতা, খতিয়ে দেখা হবে।

দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক দোষারোপ কাম্য নয়। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হলে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। তদন্তের আগে এর ভেতরে রাজনৈতিক কারণ খোঁজা কেবল দুরভিসন্ধি নয়, প্রকৃত সত্যকে চাপা দেওয়াও। বাংলাদেশে কারখানা, অফিস, মার্কেট, বসতবাড়ি—কোনোটাই নিরাপদ নয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে স্থাপনা ও পরিষেবাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা ভবন বানান, তাঁদের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি যাঁদের ওপর তদারকির ভার, তঁারাও দায় এড়াতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে দেখা হোক কোন স্থাপনা নিরাপদ আর কোনটি ঝুঁকিপূর্ণ। কাজটি দুর্ঘটনা ঘটার পর নয়, আগেই করতে হবে।