দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চরম ভোগান্তিতে আছে সাধারণ মানুষ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিলেও তার তেমন বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখানে সিন্ডিকেটকে দুষছেন। সিন্ডিকেট ভাঙতে যতটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখা দরকার, তা দেখা যাচ্ছে না সরকারের পক্ষ থেকে। ফলে বাজারে নানাভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা চলমান। যেমনটি দেখা যাচ্ছে জয়পুরহাটে বীজ আলুর ক্ষেত্রে।
বাজারে এখন যেসব খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তার মধ্যে অন্যতম আলু। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে দুই মাস আগে পণ্যটির আমদানি শুল্ক কমিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর আমদানিও হয়েছে। তবে বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়নি; বরং দাম বেড়েছে। আলুর বাড়তি চাহিদার কারণে মজুতদারেরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। মজুতদারি রোধে তদারকি ও অভিযান পরিচালনায় যথেষ্ট ঘাটতি আছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বীজ আলুর ক্ষেত্রেও।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জয়পুরহাটে মৌসুম শুরুর আগেই বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এভাবে কারসাজির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে তাঁরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত জোগান থাকলেও বেশির ভাগ ব্যবসায়ী তাঁদের দোকান ও গুদামে বীজ আলু রাখছেন না। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মণপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বেশি রেখে অজ্ঞাত স্থান থেকে কৃষকের কাছে বীজ আলু পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা।
স্থানীয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও তা নিয়েও আছে অভিযোগ। কৃষকেরা বলছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে লোকদেখানো জরিমানা ছাড়া তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বীজ আলুর সংকটের অজুহাতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও খাওয়ার উপযোগী আলু বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কে প্যাকেটজাত করছেন। এসব নিম্নমানের বীজ আলু কিনে কৃষকদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ হাজার মেট্রিক টন বেশি বীজ আলুর চাহিদা আছে। এখনো আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে পুরোদমে আলুর চাষ শুরু হয়নি। বাজারে যে পরিমাণ বীজ আলুর সরবরাহ আছে, তাতে কোনো সংকট থাকার কথা নয়।
কৃষি বিপণন কর্মকর্তার বক্তব্য, তাঁরা বীজ আলুর বাজার তদারক করছেন। স্থানীয় প্রশাসনও তাঁদের সহযোগিতা করছে। দাম বেশি রাখায় দুই ডিলারকে জরিমানা করা হয়েছে। তঁাদের ডিলারশিপ বাতিলের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাজার তদারকি অব্যাহত আছে।
আমরা আশা করব, কোনো প্রকার মজুতদারিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হোক। যেসব অসাধু ব্যবসায়ী অজ্ঞাত স্থান থেকে বীজ আলু সরবরাহ করছেন, চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।