সাতকানিয়ায় প্রশাসনের কর্তারা তৎপর হোন

দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো হুমকির মুখে আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বালুখেকো, মাটিখেকো ও দখলদারদের তৎপরতা বেড়েছে সেখানে। স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালানোসহ নানা ব্যবস্থা নিলেও তা যথেষ্ট নয়। সেখানে পাহাড় কাটা থামানো যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে সেখানকার পাহাড়গুলো হারিয়ে যেতে বেশি দিন লাগবে না। সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নে একটি পাহাড়ের এক পাশ কেটে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে এ পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে। এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কাঞ্চনা ইউনিয়নের গুরগুরি পশ্চিম পাড়া ডলুঘোনার ডালা এলাকায় পাহাড়টি সাবাড় করে বালু বিক্রির রমরমা ব্যবসা চলছে। কেটে ফেলা অংশ থেকে অন্তত ১০০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হয়েছে। ডাম্প ট্রাকে করে বালু নিয়ে যাওয়া হয়। বালুবাহী এসব ট্রাকের চলাচলের কারণে সেখানকার সড়কও বেহাল হয়ে পড়েছে। 

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল আলমের নির্দেশে প্রায় দুই মাস ধরে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। তিনি ছাড়াও এক ইউপি সদস্য পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত। যদিও নুরুল আলম পাহাড় কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রমজান আলীরও অভিযোগ, নুরুল আলমের নির্দেশেই এ পাহাড় কাটা চলছে। তিনি বলেন, বালু বিক্রির জন্য পাহাড় কেটে বিরানভূমি করে ফেলা হচ্ছে। সড়কটিতেও ধুলাবালু ছাড়া আর কিছু নেই।

পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে সর্বত্র একটি দৃশ্য আমরা দেখে থাকি, তা হলো রাতের বেলায় এই অপকর্ম ঘটিয়ে থাকে অভিযুক্তরা। কাঞ্চনায়ও তেমনটি দেখা গেছে। প্রশাসনের চোখ এড়াতে রাতের সময়টিকেই বেছে নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু দুই মাস ধরে একটি পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে, প্রশাসনের নজরেই পড়ল না, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের সময় পাহাড় কাটার সরঞ্জাম, মাটি পরিবহনের গাড়ি বা কোনো ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। অভিযানের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ পরিবেশ অধিদপ্তরকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন।

ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাহাড় কেটে বালু বিক্রির বিষয়টি আমাদের কেউ জানাননি। পাহাড় কাটার বিষয়টি তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করি অতি সত্বর জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা আমরা দেখতে পাব। জড়িত ব্যক্তিরা যতই প্রভাবশালী হোন না কেন, তাঁদের কোনোভাবে ছাড় নয়।